সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই লাশের রহস্য কাটল না ডিএনএ টেস্টেও

মাহবুব মমতাজী

দুই লাশের রহস্য কাটল না ডিএনএ টেস্টেও

নেত্রকোনার কলমাকান্দার গৃহবধূ মিনারা আক্তার। ২০১৯ সালের ৪ মার্চ তিনি নিখোঁজ হন। একই বছরের ২৮ নভেম্বর উলুকান্দায় উব্দাখালী নদী থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মানুষের একটি কঙ্কাল উদ্ধারের খবর পেয়ে ছুটে যান আশপাশের মানুষ। প্রাথমিকভাবে লাশটি মিনারার বলে শনাক্ত করে স্বজনরা। সন্দেহভাজন এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএ প্রতিবেদনে। ডিএনএ প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ধার হওয়া লাশটি মিনারার নয়। একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। এখানকার হারিন্দা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন এমরান। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি নিখোঁজ হন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে শীতলক্ষ্যায় একটি লাশ ভেসে ওঠে। লাশটি এমরানের বলে শনাক্ত করে পরিবার।

এমরান হত্যা মামলায় গ্রেফতার একাধিক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এখানেও বিপত্তি ডিএনএ প্রতিবেদনে। বলা হয়, উদ্ধার হওয়া লাশটি এমরানের নয়, অজ্ঞাত কোনো নারীর। সিআইডি বলছে, মিনারা হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে তার সতীন দিলোয়ারাকে আটক করে থানা পুলিশ। মিনারার স্বামী নাজিরপুর ইউনিয়নের গাংধরকান্দা গ্রামের প্রবাসী কামাল। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ওমান প্রবাসী দিলোয়ারা বেগম ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর একই ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে ছুটি কাটাতে তার বাপের বাড়িতে যান। আর ৩০ নভেম্বর ছুটি শেষে তার ওমানে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। দুই দিন আগে সন্ধ্যায় বস্তাবন্দি অবস্থায় কঙ্কাল উদ্ধারের খবর পেয়ে দিলোয়ারা বেগম ওই রাতেই নাইট কোচে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই রাতেই পুলিশ সন্দেহজনক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তাকে আটক করে।

সিআইডির ডিআইজি (ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ) ইমাম হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, মিনারার স্বজনদের সঙ্গে লাশের ডিএনএ মেলেনি। এতে মামলাটির তদন্ত জটিল হয়ে গেছে।

নেত্রকোনা সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী দিলোয়ারা ওমান থেকে মোবাইলের মাধ্যমে বলে যে বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছেন। বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন দিলোয়ারার বোনের জামাই আলম ও তার মেয়ে জামাই সুজাত ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেবেন। মিনারা সেই টাকা তোলার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। এই হত্যায় আলমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। কিন্তু ডিএনএতে লাশ শনাক্ত না হওয়ায় মামলাটির অগ্রগতি হচ্ছে না।

এদিকে রূপগঞ্জের এমরান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক হাসিনা বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, ডিএনএ প্রতিবেদনে যা-ই আসুক না কেন, এমরান যে খুন হয়েছেন, তা নিশ্চিত। এ মামলায় তারা পাঁচজনের জবানবন্দি পেয়েছেন, এর মধ্যে দুজন আসামির এবং তিনজন সাক্ষীর। তাদের জবানবন্দিতে এমরানকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়েছিলেন এমরান। তিনি স্থানীয় একটি কলেজে পড়তেন। পাশাপাশি বালুর ব্যবসা করতেন। এমরানের খোঁজ না পেয়ে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ থানায় একটি জিডি করে পরিবার। ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি গলিত লাশ ভেসে ওঠে। লাশটি এমরানের বলে শনাক্ত করে পরিবার। ২৩ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন এমরানের বড় ভাই মোস্তফা। মামলায় সাত আসামির নাম উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, তিনবার ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবারই প্রতিবেদনে দেখা যায়, লাশটি এমরানের নয়, কোনো এক নারীর। তবে এই নারী কে, তা শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী কোনো সংস্থা।

সর্বশেষ খবর