সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য

ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়, বাসে ধীরগতি, লঞ্চে বেড়েছে যাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য

ঘরমুখো মানুষের ভিড়। রাজধানীর মহাখালীতে গতকাল -জয়ীতা রায়

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো হচ্ছে নগরবাসী। ট্রেন স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। অনলাইনে ট্রেনের আগাম টিকিট কেটে স্বস্তি নিয়ে যাত্রা করছেন যাত্রীরা। তবে নির্ধারিত নিয়মে টিকিট পেলেও ঈদযাত্রার পঞ্চম দিনে গতকাল দুটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। একই সঙ্গে সড়ক পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি

স্থানে যানবাহনের চাপ থাকায় কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা  গেছে। তবে গতকাল থেকে যাত্রী বেড়েছে লঞ্চেও। বাসযাত্রায় অনেক রুটে ছিল বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য। দ্বিগুন ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে।  ট্রেনযাত্রা : ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ২ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে ট্রেন স্টেশনগুলোতে বাড়ছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে গতকাল কমলাপুরে দুটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। কমলাপুর স্টেশনের অন বোর্ড স্ক্রিনে রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনের সাম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৪টা। কিন্তু সেটি আরও আধঘণ্টা বিলম্ব করে ছেড়েছে। এদিকে খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস  বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও আড়াই ঘণ্টা পর ২টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায়।

ঈদযাত্রার পঞ্চম দিনে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছেড়ে আসার সময় কুষ্টিয়া রেল ক্রসিংয়ে বালুর ট্রাকের সঙ্গে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কমলাপুর রেল স্টেশনে এসে পৌঁছায়। পরে খুলনার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে ২টা ১০ মিনিটে। তবে কুষ্টিয়া রেল ক্রসিংয়ে বালুর ট্রাকের সঙ্গে বাধাগ্রস্ত হলেও বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি ট্রেনও ঢাকায় ফিরতে দেরি হওয়ায় ছাড়তে দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৩৩টি ট্রেন ছেড়েছে। তবে ট্রেন শিডিউলে কিছুটা বিপর্যয় হয়েছে। ট্রেনগুলো ঢাকায় প্রবেশ করতেই দেরি হয়েছে। ফলে এখান থেকে ছাড়তে দেরি হয়েছে।’

সড়কপথ : ঈদযাত্রায় সড়কপথে যানবাহনের চাপ বাড়ায় কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে দেশের ২৩ জেলার যাতায়াতের একমাত্র সুবিধাজনক সড়কপথ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ছে চোখে পড়ার মতো। অতিরিক্ত যাত্রীবহনে এ মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আওতাধীন শফিপুর ও উওরবঙ্গের ট্রানজিট খ্যাত চন্দ্রা পয়েন্টে পরিবহনের চাপ দেখা গেছে। এতে সড়কে যানচলাচলে কিছুটা ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী, চিটাগাংরোড, কাঁচপুর, শহিদনগর, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাজার, নিমসার বাজার, চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় যান চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এর বড় কারণ যানবাহনের চাপ। সেই সঙ্গে আছে যাত্রী ওঠানামা ও সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং। চট্টগ্রাম থেকে আসা তিশা বাসের যাত্রী মো. শাহপরান বলেন, চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় যানজট ছিল। তবে সেটি বেশি নয়। কিন্তু কুমিল্লা অংশের কোথাও গাড়ি দাঁড়ায়নি। চৌদ্দগ্রাম বাজারে চট্টগ্রামমুখী লেনে ধীরে ধীরে গাড়ি চলছে। এশিয়া বাসের চালক ওমর ফারুক বলেন, ‘গত কয়েক বছর যানজট নেই। শান্তিতে আছি। আগে এক ট্রিপ নিয়ে সকালে রওনা হলে বিকাল হইতো। অনেকে অসুস্থ হয়ে যেত রাস্তায়। তবে ঢাকা থেকে বের হতে যাত্রাবাড়ী, চিটাগাং রোড, কাঁচপুরসহ কুমিল্লার কয়েকটি স্থানে যানবাহনের চাপ ছিল বেশি। অন্যদিকে ঘরমুখো যাত্রীদের অভিযোগ, সামান্য যানজটে ভোগান্তি ও ভিড় ঠেলে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে তেমন কষ্ট মনে হচ্ছে না। গত ঈদের চেয়ে এবার দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। একতা পরিবহনের যাত্রী হাসিবুল ইসলাম বলেন, গেল ঈদের সময় বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা। এবারের ঈদের ছুটির সময় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রীবাহী বাসগুলো ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর ফলে সড়কে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পেছনের গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। এ ছাড়াও গাড়ি ওভারটেক না করলে যানজটের ভোগান্তি হবে না।

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম বলেন, ‘আমাদের প্রশিক্ষিত টিম কাজ করছে। আমরা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরে রাখি। পুলিশ টহলে আছে। কোনো খবর পেলেই আমাদের কুইক রেসপন্স টিম কাজ করে যাচ্ছে।’

লঞ্চ যাত্রা : ঈদযাত্রায় এতদিন লঞ্চে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও গতকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে চিত্র কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। বরিশাল, ভোলা ও চাঁদপুর যাওয়ার জন্য ঘাটে দাঁড়িয়ে ছিল সারি সারি বিলাসবহুল লঞ্চ। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী উঠানোর হাঁকডাক দিচ্ছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। লঞ্চ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর প্রভাব না থাকায় চাঁদপুর রুটে শিডিউল অনুযায়ী চলছে লঞ্চ। ভোলা অঞ্চলের লঞ্চগুলোতে দুপুর থেকে ভিড় করেছে যাত্রীরা। সকাল থেকে ভোলার বিভিন্ন রুটে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাকি লঞ্চগুলো ছেড়ে যাবে। লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ঈদযাত্রার শুরুর পর থেকে এত ভিড় হয়নি। রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের ভিড় বেড়েছে। আগামী দুই দিনও যাত্রীর চাপ থাকবে।

সর্বশেষ খবর