মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
ঈদের পর কী করবে দুই দল

কোন্দল মেটাতে সফরে বেরোবেন কেন্দ্রীয় নেতারা

রফিকুল ইসলাম রনি

কোন্দল মেটাতে সফরে বেরোবেন কেন্দ্রীয় নেতারা

অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে মাঠপর্যায়ে সংগঠনের গতি ফিরিয়ে আনাতে এবং আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধে ঈদের পর জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক সফরে বেরোবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় জেলা পর্যায়ে বিশেষ বর্ধিত সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘স্বতন্ত্র’ কৌশলের কারণে অনেক জেলা-উপজেলায় শুরু হওয়া দলীয় কোন্দল ইতোমধ্যে আরও ঘনীভূত হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ৮ মে ও ২১ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের এমপি বনাম স্থানীয় নেতৃত্ব দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছে। সারা দেশে চলমান দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন, চলমান সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম জোরদার করাই কেন্দ্রের এ সাংগঠনিক সফরের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার কোথাও প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব, কোথাও এমপির সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধ, কোথাও সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মন কষাকষি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যা নিয়ে জর্জরিত আওয়ামী লীগের তৃণমূল। এসব দ্বন্দ্ব মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ক্ষেত্র বিশেষে অনেকটা নিরুপায় তারা। তারা বলছেন, দলের অভ্যন্তরে যে কোনো বিশৃঙ্খলা সাংগঠনিকভাবেই দমন করা হবে। কিন্তু তাদের হুঁশিয়ারি কানে তুলছেন না অনেকেই।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ধিরে ধিরে বাড়ানোর দিকেই আছি। নির্বাচনের পর থেকেই দলকে সুসংগঠিত করছি। রোজার মধ্যেও কাজ অব্যাহত ছিল। ঈদের পর কার্যক্রম জোরদার করব। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরেজমিনে যাব। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভোটারদের সমন্বয় সাধন, সম্পর্কের উন্নয়ন এবং মানুষের প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য যেখানে যা প্রয়োজন তাই করব। কোথায় যদি কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা সবারই দায়িত্ব।’

সূত্রমতে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে এবার কাউকে দলীয় প্রতীক নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেশি প্রার্থী এবং ভোটারের ব্যাপক অংশগ্রহণ করাই এর মূল লক্ষ্য। কিন্তু কিছু এমপি-মন্ত্রী এতে সংকট তৈরি করছেন। কেউ স্ত্রী, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, শ্যালকসহ আত্মীয় স্বজনদের প্রার্থী করতে যাচ্ছেন। এতে করে ওইসব উপজেলায় দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসছে। এগুলো মেটানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠছেন। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা-উপজেলায় গিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপজেলা ভোট নিয়ে আমাদের অনেক জায়গায় সংকট আছে। যদিও দল কাউকে মনোনয়ন বা প্রতীক দেবে না। তারপরও কিছু জায়গা এমপিরা প্রার্থী দিচ্ছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। এ সংকট নিরসন একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা সম্মেলন ও বর্ধিত সভা করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ঈদের পর জেলা সফরে বের হবেন।’ জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন অথবা নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগও নেওয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। আর যেসব সংগঠনের সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি, সেগুলোতেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে মাঠে নামানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের কয়েকজন নেতা। অবশ্য এরই মধ্যে দেশজুড়ে উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শুরু হওয়ায় ব্যস্ত সময় কাটাবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। এই ব্যস্ততার মধ্যেও দল গোছানোর নানা কার্যক্রম গ্রহণ এবং বাস্তবায়নও তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদের পর ঢাকা বিভাগীয় নেতাদের নিয়ে রাজধানীতে একটি সভা করব। এরপর যেসব জেলায় সংকট বেশি সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সফর করব। প্রয়োজনে সিরিজ বৈঠক করব নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। সবার কথা শুনব, একসঙ্গে সংকট নিরসন করব।’ মাঠ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, উপজলা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দ্বন্দ্ব সংঘার্ত শুরু হয়েছে। নির্বাচন শুরু হওয়ার পর এ সংঘাত আরও বাড়তে পারে। আবার আত্মীয়স্বজনদের বিজয়ী করতে কিছু এমপি-মন্ত্রীদের মরিয়া ভাবও ভাল চোখে দেখছেন দলের হাইকমান্ড। কাজেই উপজেলা নির্বাচন যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে করা যায় সেদিক খেয়াল রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষিত দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য আমরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগীতা করবো। অন্যদিকে কেউ যেন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে এবং হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য সর্বদা মনিটরিং করা হবে। আমরা চাই প্রভাবমুক্ত একটি উপজেলা নির্বাচন। জনগণের যে জনপ্রিয় ও দক্ষ মানুষ তারাই বিজয়ী হোক।’

জানা গেছে, ২০২২ সালে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম শুরু হলেও তা গতি পায়নি। সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কাজে গতি ফেরাতেও মাঠে নামছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

সর্বশেষ খবর