মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
ঈদের পর কী করবে দুই দল

ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে গুরুত্ব দেবে বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে গুরুত্ব দেবে বিএনপি

টানা আন্দোলন করেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করতে পারেনি বিএনপি। তবুও এই আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চায় রাজপথের প্রধান এ বিরোধী দলটি। এজন্য ঈদের পর ইস্যুভিত্তিক জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি বাড়িয়ে ধীরে ধীরে রাজপথের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করবে বিএনপি। একই সঙ্গে দল পুনর্গঠন ও হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে তুলতে ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করে চলেছে দলটি।

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলাসহ নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে সারা দেশে ইফতারের সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যের মাধ্যমে নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলমান। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পাহাড়ের চলমান অনিয়মসহ সব জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে ঈদের পর দলের হাইকমান্ড সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে বড় কোনো আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই বিএনপির। তবে ঈদের পর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হবে। সামনে গরমকালে বিদ্যুতের লোডশেডিং আরও বাড়বে। তখন কর্মসূচিও বাড়ানো হবে। তবে সব কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। ঈদের পর যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে যুগপতের কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলনের পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিও পালন করবে বিএনপিসহ মিত্ররা। তবে ব্যাপক ভিত্তিতে নয়, স্বল্প পরিসরে থেমে থেমে কর্মসূচি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চলবে। দিবসভিত্তিক কর্মসূচির সঙ্গে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আন্দোলন এগিয়ে নেবে বিএনপি ও শরিকরা।

নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখার উদ্যোগ : জানা যায়, এত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখাই বিএনপির জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর জন্যই সারা দেশে দলটির নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া নির্যাতিত এবং কারাগারে আটক নেতাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন দলটির শীর্ষনেতারা। আর্থিকভাবে অসচ্ছল নেতা-কর্মীদের রমজানের বাজারসহ ঈদ উপহারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তাও দিচ্ছে দলটি। সারা দেশে কারাগারে অন্তরীণ নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সারা দেশে হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত যুবদলের নেতা-কর্মীর পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন চলমান। ঈদের পর আরও সক্রিয়ভাবে মাঠে নামব।

জানা যায়, কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের বাসায় গিয়েও দলটির সিনিয়র নেতারা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পরিবারের সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। অসুস্থ নেতাদেরও দলের পক্ষে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। নিখোঁজ ও মারা যাওয়া নেতাদের পরিবারে পাঠানো হচ্ছে ফলমূল, আর্থিক অনুদানসহ নানা ঈদ উপহার। অন্যান্য বছর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার মাহফিল করলেও এবার তার বিস্তৃতি ঘটেছে ওয়ার্ড পর্যায়ে। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সরব রাখতেই এ পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। যার ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইফতার মাহফিল। তাঁতীদল আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইফতারের মাধ্যমে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধিসহ নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। মারা যাওয়া, নিখোঁজ ও ‘নির্যাতিত’ নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেখভালে গত কয়েক বছর ধরে ‘জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’ নামে একটি সংগঠন কাজ করে আসছে। এই সংগঠনের ব্যানারেও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের স্বজনদের উপহার ও আর্থিক সহযোগিতাও দিয়ে আসছেন তারা। ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাসির উদ্দীন নাসির জানান, হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত দলের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর বাসায় ফলমূলসহ উপহার পাঠানো হয়েছে। তারা বলেন, ঈদের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য ক্যাম্পাসে তারা প্রবেশ করবেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে তারা ঈদের পর আরও সক্রিয় হবেন। সামগ্রিক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকারের মিথ্যা মামলা ও জুলুম-নির্যাতনের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মনোবল আরও কঠোরতর হয়েছে। এখন আমাদের দৃষ্টি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে।

সর্বশেষ খবর