মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিতওয়ের কনস্যুলেট থেকে কূটনীতিক সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ

মিয়ানমার সীমান্তে যুদ্ধ আরও ১৪ বিজিপি বাংলাদেশ

নয়াদিল্লি ও টেকনাফ প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে শহরের বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে কূটনীতিক ও কর্মচারীদের ইয়াঙ্গুনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কনসাল জেনারেল জাকির আহমেদ কূটনীতিক ও কর্মচারীবৃন্দ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় চার্টার্ড ফ্লাইটে সিতওয়ে থেকে সরাসরি ইয়াংগুনে গিয়েছেন। চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা ইয়াঙ্গুন থেকে কাজ করছেন। তবে সিতওয়ের কনস্যুলেটে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এখনও উড্ডীয়মান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

অন্যদিকে, ভারতও সিতওয়ে শহরে কনস্যুলেট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জয়সোয়াল বলেছেন, ‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভারতের কূটনীতিকদের জরুরি ভিত্তিতে ইয়াঙ্গুনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে মান্দালয়ের কনস্যুলেট স্বাভাবিক কাজ করছে। ভারত পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে চলেছে।’ জানা গেছে, মিয়াবাদী শহরের সেনা ছাউনি বিদ্রোহীদের দখলে। সেনাবাহিনী শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। ভারতীয় মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখন সত্যিই স্পর্শকাতর। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হচ্ছে।’ মিয়াবাদী শহরে তিন ভারতীয়কে অপহরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সচেষ্ট আছি। আমাদের দূতাবাস এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হতে পারে। মিয়াবাদী শহরের পতনের সংবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এখান থেকেই থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য হয়ে থাকে।’

দুই দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ১৪ বিজিপি সদস্যের অনুপ্রবেশ : কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার খারাংখালী ও ঝিমংখালী সীমান্ত দিয়ে দুই দিনে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল ও রবিবার সকালে তারা মিয়ানমারের নাকফুরা থেকে নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। গতকাল ভোররাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী নাফ নদ সীমান্ত দিয়ে পাঁচ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগে রবিবার সকালে অস্ত্রসহ নয় বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব সদস্যকে নিরস্ত্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর হেফাজতে টেকনাফের হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয়ে রাখা হয়। টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে গত দুই দিনে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী ও ঝিমংখালী সীমান্ত দিয়ে ১৪ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, ৩০ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ১৭৭ বিজিপি সদস্য। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর আরও তিন সদস্য তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি স্কুলে বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সর্বমোট ১৯৪ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার সেনা, বিজিপি সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জনকে ১৫ দিন পর কক্সবাজারের ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে সাগরপথে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই-সংঘাত চলছে টানা দুই মাস ধরে।

 

সর্বশেষ খবর