শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

যাত্রী তুলতে বেপরোয়া লঞ্চ রশি ছিঁড়ে পাঁচ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার কর্মী বিল্লাল হোসেন (৩০) বাবাকে হারিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। বেঁচে আছেন কেবল মা আলেয়া বেগম। মা থাকেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। ঈদের ছুটি পেয়ে বিল্লাল প্রতিবার ঈদ করতে ছুটে যান মায়ের কাছে। এবারও চেয়েছিলেন ঈদের দিন মায়ের হাতের রান্না করা সেমাই মুখে দিয়ে গ্রামের ঈদগাহ ময়দানে সবার সঙ্গে নামাজ আদায় করবেন। তবে স্ত্রী মুক্তা বেগম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ঈদের আগে বাড়িতে যাননি। ঈদের দিন যাত্রীর চাপ কম থাকবে ধারণা করে এদিন বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু ঈদের দিনের এ যাত্রাই তার শেষ যাত্রা হয়ে গেল। বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে সদরঘাটের পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় লঞ্চের ছিঁড়ে যাওয়া মোটা রশির আঘাতে বিল্লালের সঙ্গে তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫) এবং একমাত্র শিশুসন্তান মাইশার (৪) মৃত্যু হয়।

ঈদের দিন বাড়ি ফেরার বদলে বিল্লালের ঠাঁই হয় মর্গে। পরনে ঈদের জন্য কেনা নতুন জামা ও জিনসের প্যান্ট। তার শরীরের কোথাও তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে মাথায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। বিল্লালের পাশে রাখা ছিল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুক্তার লাশ। তার পরনেও ঈদের জন্য কেনা নতুন জামা। আর তাদের আদরের একমাত্র সন্তান মাইশার লাশও পাশে রাখা। তার পরনেও নতুন জামা। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বিকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে লঞ্চের ধাক্কায় ছিঁড়ে যাওয়া রশির আঘাতে এই তিনজনসহ মারা যান মোট পাঁচজন। সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অন্য দুজন হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের রবিউল (১৯) এবং পটুয়াখালীর রিপন হাওলাদার (৩৮)। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এমভি তাসরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামক দুটি লঞ্চ দড়ি দিয়ে পন্টুনে বাঁধা ছিল। এ দুই লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান নামের আরেকটি লঞ্চ ভেড়ানোর সময় এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে যায়। তখন সেটি পন্টুনে থাকা যাত্রীদের গায়ে গিয়ে পড়ে। এতে পাঁচ যাত্রী গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এই পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির কথাও জানান। এ ঘটনায় দুই লঞ্চের চালক এবং ম্যানেজারসহ পাঁচজনকে আটক করে নৌ-পুলিশ। তারা হলেন- ফারহান লঞ্চের দুই চালক ও ম্যানেজার এবং এমভি তাসরিফের দুই চালক। পাশাপাশি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (ক্রয় ও সংরক্ষণ বিভাগ) রফিকুল ইসলামকে।

হতাহতের ঘটনায় এদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডের শেষ দিন গত রবিবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা দায় স্বীকার করেন। পুলিশ জানায়, পাঁচ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় শুক্রবার ফারহান-৬ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার আবদুর রউফ (৫৪), দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মোহাম্মদ সেলিম হাওলাদার (৫৪), লঞ্চের পরিচালক শাহরুখ খান (৭০) এবং তাসরিফ-৪ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মিজানুর রহমান (৪৮) ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মনিরুজ্জামানকে (২৭) গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম গতকাল জানান, পাঁচ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দায় ছিল বলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন ওই পাঁচ আসামি। তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে হাজির করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর