মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে আরেক বাংলাদেশি নিহত

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হলেন আরেক তরুণ বাংলাদেশি। তার নাম হোসেন আল রাজি (১৯)। মিশিগান স্টেটের ওয়ারেন সিটিতে ১২ এপ্রিল দুপুর পৌনে ২টায় নিজ বাড়িতে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২৭ মার্চ নিউইয়র্কে একই বয়সী বাংলাদেশি উইন রোজারিওকে হত্যার সঙ্গে এ ঘটনার হুবহু মিল রয়েছে।

ওয়ারেন সিটি পুলিশের কমিশনার চার্লস রুস্টম জানান, ১২ এপ্রিল শুক্রবার ভরদুপুরে ৯১১-এ পরিবারের পক্ষ থেকে ফোন আসে। সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুলেন্সসহ তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে পৌঁছান। পুলিশ অফিসাররা ওই যুবকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখতে পান এবং হাতে থাকা অস্ত্র ফেলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই যুবক পুলিশ অফিসারদের দিকে অস্ত্র নিয়ে তেড়ে যান। এ অবস্থায় পুলিশ অফিসাররা আত্মরক্ষার্থে ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। পরে আহত রাজিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মিশিগানের সংবাদদাতা আশিক রহমান জানান, এ ঘটনায় নিহতের বাবা, মা, ভাই-বোন সবাই এখন বাকরুদ্ধ। নিহতের বাবা মোহাম্মদ আতিক হোসেন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও আমি সকালে একসঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ি। তারপর সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। দুপুরের দিকে ওর মা ও আমার মেজো ছেলে আমাকে বলছে, রাজি অসংলগ্ন আচরণ করছে। আমিও দেখি অবিশ্বাস্য আচরণ করছে। এ অবস্থায় মেজো ছেলেকে দিয়ে ৯১১-এ কল দিই। কিছুক্ষণ পরই পুলিশ আমরা নিরাপদ স্থানে আছি কি না জানতে চায়। আমরা গ্যারেজের গাড়ির ভিতর আছি বলার কিছু সময়ের মধ্যে দু-তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর পুলিশ অফিসাররা আমাদের স্থানীয় পুলিশ স্টেশন নিয়ে এক এক করে সবার জবানবন্দি নেন। আমরা বাসায় ফিরে আসার পর বিকাল ৪টার দিকে খবর পাই আমার ছেলে মারা গেছে।’ আতিক হোসেন বলেন, ‘আমি অ্যাম্বুলেন্সের সাহায্য চাইলাম ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আর পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল! বিষয়টা আমার বোধগম্য নয়। কী এমন অপরাধ করল আমার ছেলে, যে কারণে ওকে গুলি করে মারতে হলো।’

এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশি- আমেরিকান সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। সবার কাছে তিনি ন্যায়বিচার চান। এ বিষয়ে সিটি পুলিশের কমিশনার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে। এদিকে হোসেন আল রাজি হত্যার বিষয়ে হ্যামট্রমিক সিটির ডেপুটি মেয়র কামরুল হাসান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘একটি গুলিতেই রাজি লুটিয়ে পড়ার পর আরও কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিতের মধ্যে কি পুলিশের প্রতিহিংসাপরায়ণতার প্রকাশ ঘটেনি?’ কামরুল হাসান অবিলম্বে পুলিশের বডি ক্যামেরা প্রকাশ এবং এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চান। নিহতের পিতা বলেন, ‘আমার ছেলের মৃতদেহ এখনো হাসপাতালে পড়ে আছে, দেখতেও পারছি না। ১৫ এপ্রিল ওর লাশ হস্তান্তরের পর জানাজা শেষে ইসলামিক সেন্টার অব ওয়ারেনে দাফন করা হবে।’ জানা যায়, মোহাম্মদ আতিক হোসেনের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার সুপাতলায়। প্রায় ১৬ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তারা। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে হোসেন আল রাজি দ্বিতীয়। উল্লেখ্য, ২৭ মার্চ নিউইয়র্ক সিটির ওজোন পার্কে উইন রোজারিও তার মা আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে অসংলগ্ন আচরণ করায় ছোট ভাই ৯১১-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পুলিশ বাসায় এসে একইভাবে গুলি চালায়। গুরুতর অবস্থায় নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উইনকে মৃত ঘোষণা করেন। উইন রোজারিও হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চেয়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্কে। তবে এ পর্যন্ত কোনো পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সংবাদ জানা যায়নি।

 

 

সর্বশেষ খবর