শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশজুড়ে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

জনজীবন বিপন্ন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

অসহ্য গরম থেকে একটু স্বস্তির আশায় শ্যালো মেশিনের ঠান্ডা পানিতে গোসল করছেন কৃষক। গতকাল সারিয়াকান্দি উপজেলার সুতানাড়া গ্রাম থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়ার শঙ্কায় তিন দিনের জন্য হিট অ্যালার্ট দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ গতকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া আরও বৃদ্ধি পেতে পারে তাপমাত্রা। এ ছাড়া জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্য এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আজ সকাল পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার          ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দিনাজপুর, রাঙামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রার সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।

বগুড়া : বগুড়ায় তাপমাত্রা যেন প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রচণ্ড গরম আর রোদে কোথাও ঠাঁই মিলছে না। ঘরে-বাইরে স্বস্তি নেই কোথাও। ছোট-বড় সবাই গরমে অতিষ্ঠ। টানা কয়েকদিনের তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বাগেরহাট : বাগেরহাটে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপপ্রবাহে বাগেরহাটসহ যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া জেলায় তিন দিনের জন্য হিট অ্যালার্ট সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। জেলাজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষরা। তীব্র তাপপ্রবাহে কৃষকরাও খেতে কাজ করতে পারছেন না। সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচলও অনেক কমে গেছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের লাগাতার কয়েকদিনের চরম গরমে জেলার জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

খুলনা : আবহাওয়া অফিস বলছে, খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আরও কয়েকদিন এ অবস্থা থাকতে পারে। খুলনায় এবার তাপমাত্রা ২৩ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়াতে পারে। ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল খুলনায় সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এদিকে অতিরিক্ত গরমে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। গরম যত বাড়ছে জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া রোগীও তত বাড়ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৪৮টি শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ১১০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। একইভাবে খুলনা শিশু হাসপাতালের ২৭৪টি শয্যার একটিও খালি নেই। ২০-২৫টি শয্যা প্রতিদিন খালি হলেও গড়ে ৭০-৮০ জন অসুস্থ শিশুকে ভর্তির জন্য হাসপাতালে আনছেন অভিভাবকরা। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেককে ফেরত দিতে হচ্ছে। এর বাইরে বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে আরও ৫০০-৬০০ শিশু রোগী। যাদের অধিকাংশই জ্বর, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

চুয়াডাঙ্গা : চার দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে নাজেহাল চুয়াডাঙ্গাবাসী। একই সঙ্গে এ চার দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ছিল চুয়াডাঙ্গায়। এ অবস্থায় জেলাজুড়ে হিট অ্যালার্ট জারি করে শহরে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বেলা ৩টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসনের প্রচারণায় অকারণে ঘরের বাইরে আসা বন্ধ করার কথা বলছে। এ ছাড়া বেশি তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি তথা বয়স্ক ব্যক্তি, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং শিশুদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর