শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ইতিহাসের দেবী চৌধুরাণীর নাপাইচণ্ডী আজও উপেক্ষিত

নজরুল মৃধা, রংপুর

ইতিহাসের দেবী চৌধুরাণীর নাপাইচণ্ডী আজও উপেক্ষিত

রংপুরের পীরগাছার মন্থনার জমিদার ইতিহাস খ্যাত জয়দুর্গা দেবী (দেবী চৌধুরাণী) ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যে স্থানে নিহত হয়েছিলেন সে স্থানটি এখনো উপেক্ষিত। একই সময় ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিহত হন ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায়, দেবী চৌধুরাণীর ছোট ভাই কেষ্টকিশোর চৌধুরীসহ অসংখ্য ফকির-সন্ন্যাসী। তবে প্রতি বছর বৈশাখের বৃহস্পতিবার ওই স্থানে মেলা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখন পর্যন্ত স্থানটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাঠের মাঝখানে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর উত্তরে লাগোয়া আর একটি দালানের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। দালান দুটির সামনে রয়েছে একটি বিরাট পুকুর। পুকুরটি দেবী চৌধুরাণীর নির্দেশে খনন করা হয় বলে কথিত রয়েছে। জরাজীর্ণ দালানটিকে মসজিদ আর ধ্বংসাবশেষ দালানের অংশটিকে মন্দির মনে করে অনেকে। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা। উত্তর ও দক্ষিণে দুটি সরু জানালা রয়েছে। পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। মাঝখানেরটি অন্য দুটি থেকে কিছুটা বড়। মেহরাবের বাঁ পাশে ইটনির্মিত তিন সিঁড়ির একটি ছোট্ট মিম্বর। মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ ফুট, প্রস্থ প্রায় ১৫ ফুট। দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৪ ফুট। ভূমি থেকে কার্নিশ পর্যন্ত উচ্চতা ১৫ ফুট। মসজিদের দেয়ালে কোনো ফলক বা নামলিপি না থাকায় এটি ঠিক কত সালে নির্মিত হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, দেবী চৌধুরাণী ওই স্থানে নিহত হলেও এটি নির্মিত হয়েছে মুঘল আমলে। ইতিহাস লেখক জুবায়ের আলী জুয়েল ও সমাজকর্মী শাহ কামাল ফারুক লাবু জানান, পীরগাছা উপজেলা সদরের ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে পাকা রাস্তার পাশেই নাপাইচণ্ডী। ১৭৮৩ সালের বৈশাখের প্রথম বৃহস্পতিবার বিদ্রোহীদের গোপন আস্তানার সন্ধান পেয়ে চণ্ডীপুর গ্রামের এ স্থানে ইংরেজ বাহিনী আচমকা আক্রমণ শুরু করে। দেবী চৌধুরাণী ইংরেজের বিরুদ্ধ বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে এখানে নিহত হন। তাঁর সঙ্গে নিহত হন অসংখ্য ফকির-সন্ন্যাসী। এ এলাকার লোকজন দেবী চৌধুরাণীকে চণ্ডীমা বলে ডাকত। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় না পারাটাকে ‘না পাইম’ বা ‘না পাই’ বলা হয়। অর্থাৎ আমি বা আমরা পারি না। দেবী চৌধুরাণী ইংরেজবিরোধী যুদ্ধে পারলেন না, হেরে গেলেন। এ কারণে চণ্ডীপুর গ্রামের এ স্থানটির নামকরণ হয় ‘নাপাইচণ্ডী’। স্থানীয়রা চণ্ডীদেবীর (দেবী চৌধুরাণীর) গৌরবগাথা স্মরণীয় রাখার জন্য লড়াইয়ের এ স্থানটিতে ‘নাপাইচণ্ডীর মেলা’ নামে মেলার প্রচলন করে। চণ্ডীপুর গ্রামটি ছিল ইংরেজবিরোধী বিদ্রোহী পীর-ফকির-সন্ন্যাসীদের শক্তিশালী গোপন ঘাঁটি। আলাইকুড়ি নদী থেকে দুটি খাল কেটে গোপন দুর্গ ভবনে সংযোগ দেওয়া হয়। এ সংযোগ খালে দেবী চৌধুরাণীর নৌকার বহর রাখা হতো। চণ্ডীপুরের গোপন দুর্গভবনে নবাব নুরউদ্দিন বাকের জং, ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরাণী ও শিবচন্দ্র রায় মাঝে মাঝে গোপন সভায় মিলিত হয়ে ইংরেজবিরোধী সংগ্রামের রণকৌশল নির্ধারণ করতেন। ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত দেবী চৌধুরাণীসহ অন্যদের পাশের এলাকায় সমাহিত করা হয়েছিল বলে ওই স্থানটির নামকরণ হয় ‘পবিত্রঝাড়’। ঐতিহাসিক এ স্থানটিও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

 

 

সর্বশেষ খবর