মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শেয়ারবাজারের কেন ভয়াবহ হাল

আলী রিয়াজ

দরপতনে শেয়ারবাজারের ভয়াবহ হাল। বিনিয়োগ করে মূলধনও বাঁচাতে পারছে না। গত কয়েক মাস একটানা দরপতন চলছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানা উদ্যোগের পরও চরম অস্থিরতায় শেয়ারবাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকটের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের। ব্যাংকিং মার্জার, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলারসহ নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এখন বিশেষ সহায়তা ছাড়া কোনো আশা দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় যেন মিলছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য- সব মিলিয়ে শেয়ারবাজারের বেহাল অবস্থা। বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) টাকার অভাবে পড়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো শেয়ার কেনার বদলে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। আবার কিছু খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরলেও ফেব্রুয়ারির পর বাজার ক্রমান্বয়ে পতনের মুখে পড়ে। সেই পতন এখনো চলছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক লেনদেন কিছুটা বাড়লেও বেশির ভাগ কোম্পানির দর কমেছে। প্রতিদিনই শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। পতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কোম্পানিগুলোও। লোকসান কমাতে দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে অলিখিতভাবেই চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডিকেট বাজার ওঠানো-নামানোর দায়িত্ব পালন করছে। অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো, বর্তমান বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। ক্রেতা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ গত এক মাসে ডিএসইর লেনদেন ছিল চরমভাবে নিম্নমুখী। এক মাসে ডিএসইর সূচক কমেছে প্রায় ৩০০ পয়েন্ট। এই সময় লেনদেন হারও ছিল ৪০০ কোটি টাকায়।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। বাজার স্থিতিশীলতায় ফেরাতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। বাজার কীভাবে স্থিতিশীল করা যায় সেটা নিয়ে গতকাল বৈঠক করে বিএসইসি। বৈঠকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টসহ পুঁজিবাজারের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসসমূহের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সভায় দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়সমূহের ওপর আলোচনা হয়। এ সভায় সংশ্লিষ্টরা নানা সংকটের কথা তুলে ধরেন। ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাংকসমূহের হেড অব ট্রেজারিদের সঙ্গে সভা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমান পুঁজিবাজারে বিদ্যমান নানা সমস্যা সম্পর্কে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং এসব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিএসইসি ও ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা সমন্বিতভবে কাজ করার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন।

আর্থিক অবস্থার মতো পুঁজিবাজারও প্রাণবন্ত হবে

বিশেষ সাপোর্ট ছাড়া আপাতত ঠিক হবে না

দুর্বল কোম্পানি বাজারে আনা বন্ধ করতে হবে

 

সর্বশেষ খবর