শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিপন্ন লাউয়াছড়া

পর্যটক বিচরণে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

পর্যটক বিচরণে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ঢুকে প্রায় দেড় কিলোমিটার গিয়েও দু-একটি দোয়েল, শালিকের ডাক ছাড়া কোনো পাখির দেখা মেলেনি। বনজুড়ে পর্যটকদের অবাধ বিচরণে হুমকির মুখে পড়েছে বনের জীববৈচিত্র্য। বনের কোরজোন, বিনোদনজোন ও বাফারজোনের সীমানা চিহ্নিত না থাকায় বনের গহিনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা। এ ছাড়া প্রতিদিন হাজারও মানুষের ভিড়, হইহুল্লোড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বনের ভাব-গম্ভীর পরিবেশ ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে বন্যপ্রাণীরা। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণীর প্রজনন ব্যবস্থা। ভীতসন্ত্রস্ত অনেক বন্যপ্রাণী চলে যাচ্ছে অন্যত্র। ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়েও। সরেজমিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘুরে বন্যপ্রাণ-প্রকৃতির এই করুন অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের পাঁচ দিনের ছুটিতে ১২ হাজার ৫৫৮ জন দর্শনার্থী টিকিট কেটে এই উদ্যানে প্রবেশ করেছেন। একই সময়ে আরও প্রায় ১৫ হাজার দর্শনার্থীর ভিড় করেন উদ্যানের প্রবেশমুখসহ বনের ভিতরের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে। এ ছাড়া উদ্যানের ফটকের পাশেই বনে বসানো হয়েছে ১০-১২টি দোকান। এসব দোকানে দর্শনার্থীদের ভিড় বনের পরিবেশকে পরিণত করে লোকালয়ে। দোকানের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বনের ভিতর। আবর্জনার স্তূপে খাবার খুঁজে খাচ্ছে বন্যশূকর। খাবার নিয়েই দর্শনার্থীরা ঢুকে পড়ছেন বনের গহিনে। যেখানে সেখানে ফেলছেন চিপস, চানাচুর, পানির বোতল। অনেক প্রাণীও খাচ্ছে দর্শনার্থীদের দেওয়া খাবার। এতে প্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের নিজস্ব খাদ্যাভ্যাস। আবার পর্যটকের ছুরির আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বনের গাছপালা। তারা ছিঁড়ছেন লাতাগুল্ম। বনে নির্জন ও নিরাপদ পরিবেশ না পেয়ে অনেক বন্যপ্রাণী চলে যাচ্ছে অন্যত্র। মৌলভীবাজারের পশ্চিম ভানুগাছের সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া বনবিট, জানকীছড়া ও বাগমারা ক্যাম্প এলাকাকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জাতীয় উদ্যান ঘোষণার সময় বনের কোরজোন, বিনোদনজোন ও বাফারজোনের সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। যদিও আইনে বলা আছে, ‘সরকার প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য বা পরিবেশগত গুরুত্ব বিবেচনা করে কোনো সরকারি বন, বনের অংশ বা যে কোনো নির্দিষ্ট এলাকাকে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণের নিমিত্ত সুনির্দিষ্টভাবে সীমানা নির্ধারণপূর্বক অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে পারবে’। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছরেও সীমানা নির্ধারণ না করায় পুরো বন দর্শনার্থীদের জন্য উš§ুক্ত হয়ে গেছে। দর্শনার্থীরা অবাধে বনের গহিনে ঢুকে যেতে পারছেন। দিনে দিনে বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার রেঞ্চ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বনে লোকজন ও হইহুল্লোর বেশি হলে বন্যপ্রাণীদের জন্য ক্ষতি। এই উদ্যানে একদিনে কতজন দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবে এর কোনো জরিপ নেই। বনের কোরজোন, বিনোদনজোন ও বাফারজোনের সীমানা চিহ্নিত করে দর্শনার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করা জরুরি।’ সিলেটের বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের ক্ষতি বা তাদের প্রজনন যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্য আমরা দর্শনার্থীদের বনের তিনটি স্পট লাউয়াছড়া, জানকীছড়া ও বাগমারা এলাকায় ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে কোরজোন ও বিনোদনজোন আলাদা করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

 

 

সর্বশেষ খবর