বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি

বিচারে নেই অগ্রগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এগারো বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অদূরে সাভারের রানা প্লাজায় ঘটে দেশের ইতিহাসের এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে অবস্থিত আট তলা ভবনে অবৈধভাবে স্থাপন করা গার্মেন্ট কারখানাটি ধসে পড়ে নিহত হন ১ হাজার ১৩৪ জন শ্রমিক। আহত হন আরও ২ হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাদের সবাই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা শুধু দেশ নয়, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমকে। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের পাঁচ বছর পর সাক্ষ্য শুরু হলেও, অন্য মামলায় রয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ। আসামি পক্ষ বলছে, দুই মামলায় বিচার শেষ না হওয়ায় বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন ভবন মালিক সোহেন রানা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আসামিরা উচ্চ আদালতে যাওয়ায় সাক্ষ্য শুরু হতে কয়েক বছর চলে যায়।

পোশাক শ্রমিক হত্যার মামলা : সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার ৪১ আসামির মধ্যে ভবন মালিক সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক, অন্য আসামি আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। তিনজনকে বাদ দিয়ে হত্যা মামলায় এখন আসামির সংখ্যা ৩৮ জন। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন। সর্বশেষ চলতি মাসের ২১ তারিখ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। আগামী ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। হত্যা মামলার বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বিমল সমাদ্দার বলেন, ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৪ জনের জবানবন্দি শেষ হয়েছে। আলোচিত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রতি মাসে মামলার একাধিক তারিখ নেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করছি মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা যাবে।

ইমারত নির্মাণ আইনে মামলা : রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ওইদিন সাভার থানায় একটি মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। উচ্চ আদালতে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় অভিযোগ গঠনের প্রায় আট বছর পরও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

ভবন মালিক রানার তিন বছরের সাজা : ভবন ধসের পর পালিয়ে যাওয়া রানাকে ঘটনার কয়েকদিন পর যশোর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। গ্রেফতারের পর রানার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। তার সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর