বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
আদালতে মিতুর মা

অন্য নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক জেনে ফেলায় হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সাবেক পুুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পরকীয়া প্রেমের কারণেই মেয়ে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছেন মা শাহেদা মোশাররফ। গতকাল চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন শাহেদা মোশাররফ। সাক্ষ্য দেওয়ার একপর্যায়ে তিনি বাবুল আক্তারের সাজা চেয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় আদালতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর সঙ্গে বাবুলের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক মিতু দেখে ফেলায় তাকে মানসিক অত্যাচার এবং পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করেন সন্তানহারা এ মা। আসামি বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। শাশুড়ির বিস্ফোরক বিভিন্ন তথ্যের বিপরীতে একেবারে নীরব ছিলেন বাবুল। দুপুর ১২টায় চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর পর প্রথমে সাক্ষ্য দেন অবসরে যাওয়া পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন মাহমুদ, যিনি ঘটনার সময় নগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে ছিলেন। এরপর সাক্ষ্য দিতে কাঠগড়ায় দাঁড়ান মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ।

তিনি বলেন, আমার বড় মেয়ে মিতুর ২০০২ সালের ২৬ এপ্রিল বাবুল আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। তখন বাবুল আক্তার বেকার ছিল। বিয়ের পর একেবারে শুরু থেকে তাদের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না, মোটামুটি ছিল। পরে পুলিশে যোগদান করে। এরপর কক্সবাজারে এসপি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) হিসেবে বদলি হয়। সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। একদিন বাবুল আক্তার মিতুকে নিয়ে কক্সবাজারের একটি হোটেলে ওঠে। পাশের রুমে ওই নারীও ওঠে। ওই নারীর রুমে বাবুল আক্তারকে আপত্তিকর অবস্থায় মিতু দেখে ফেলে। তখন মিতু তাকে জিজ্ঞেস করে, সে এখানে কী করছে? বাবুল মিতুকে বলে বিদেশে যাওয়ার জন্য ল্যাপটপে কাজ করছে। তাদের দুজনকে এ অবস্থায় দেখে মিতুর খুব খারাপ লাগে। কিছুক্ষণ পর বাচ্চারা একা থাকায় মিতু তাদের রুমে চলে আসে। বাচ্চারা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সেও ঘুমিয়ে পড়ে।

মিতুর মা আরও বলেন, বাবুল ২০১৪ সালে মিশনে যায়। মিশনে যাওয়ার সময় তার একটি মোবাইল বাসায় রেখে যায়। ওই মোবাইলে বাবুল আক্তারকে দেওয়া ওই ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর মেসেজ খুঁজে পায় মিতু।

একই সঙ্গে বাবুল আক্তারকে ওই নারীর উপহার দেওয়া দুটি ইংরেজি বই পায় মিতু। মিতু মেসেজগুলো দুটি বড় পৃষ্ঠা ও দুটি ছোট পৃষ্ঠায় লিখে রাখে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার ছোট মেয়ের বাসায় মিতু ও তার ছেলেমেয়েরা বেড়াতে যায়। মিতু তখন আমাকে পৃষ্ঠায় লেখা মেসেজগুলো দেয়। এসব কিছু আমাদের বলায় বাবুল মিতুর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এরপর মিতু তিন-চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

মিতুর মা বলেন, মিতু চট্টগ্রামের বাসা থেকে ঢাকায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ২০১৬ সালের জুনের ৪ তারিখ রাতে মিতু আমাকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে বলে, আম্মা মাহিরের স্কুল থেকে মেসেজ এসেছে। আমাকে খুব ভোরে মাহিরকে নিয়ে স্কুলে চলে যেতে হবে। ৫ জুন সকালে মিতুর বাসার পাশ থেকে একজন মহিলা আমাকে ফোন দেন। এরপর অঝোরে কাঁদতে থাকেন শাহেদা। আদালতের বেঞ্চ সহকারী নেছার আহম্মেদ বলেন, মিতু হত্যা মামলায় মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ ৪৯ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। শাহেদা মোশাররফের জেরা বাকি রয়েছে। আজ (বুধবার) মামলার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

সর্বশেষ খবর