উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। হাট-বাজার, চায়ের দোকানে চলছে ভোটের আলোচনা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার অলিগলি। নির্বাচন কমিশনও সব প্রার্থীকে প্রচারে সমান সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে।
সংসদ সদস্যরা (এমপি) উপজেলা পরিষদের কোনো প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় যেতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনি এলাকায় অবশ্যই যেতে পারবেন। তবে কোনো প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় যেতে পারবেন না। ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে তার ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু কোনো প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন না।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য করণীয় নির্ধারণে বিভাগীয় কমিশনার, সব জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি)-সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে সব বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং পুলিশ সুপারদের উপস্থিতিতে ২৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সভায় সভাপতিত্ব করবেন। সভায় নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এ নির্দেশনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, সব বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, সব ডিসি ও এসপির কাছে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চার ধাপের তফসিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।প্রথম ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাইয়ের সময় শেষ। বৈধ প্রার্থী ১ হাজার ৭৮৬ জন, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল চলে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি হয় ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় হয়েছে ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে ২৩ এপ্রিল, আর ১৫০ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। এ ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২১ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৩ এপ্রিল, আপিল গ্রহণ ২৪-২৬ এপ্রিল, আপিল নিষ্পত্তি ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। আর ১৬১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে ২১ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি যেখানে সেখানে একাধিক সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন। তৃতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম জমার শেষ তারিখ ২ মে, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ৫ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ৬ থেকে ৮ মে। আপিল নিষ্পত্তি ৯ থেকে ১১ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে এবং ভোট ২৯ মে। এই ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট হবে। এই ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত জেলা ও অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলার ভোট আগামী ৫ জুন গ্রহণ করা হবে। তফসিল অনুযায়ী- মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে, বাছাই ১২ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। আর ভোট গ্রহণ হবে ৫ জুন। ৫৫ উপজেলার মধ্যে দুটোতে ইভিএমে ভোট হবে।