বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে সেবায়, কমেছে কৃষিতে

শ্রমবাজারে কমল নারীর অংশগ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিগত ২০২৩ সালে দেশের কৃষি খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ১০ শতাংশের মতো। যদিও শিল্প ও সেবা খাতে ১৭ শতাংশ কর্মসংস্থান বেড়েছে। শ্রম বাজারেও ব্যাপকভাবে কমেছে নারীর অংশগ্রহণ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেকারত্বের হার ছিল ৫৯ শতাংশ, যেখানে বিশ্বের অগ্রসরমান অন্য দেশে এই হার ৭০ শতাংশ। শুধু দক্ষিণ এশিয়া এমন একটা অঞ্চল, যেভাবে গত দুই দশকে কর্মক্ষম মানুষের হার কমেছে। যেসব কর্মী কৃষি ছাড়ছেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলো তাদের প্রক্রিয়াকরণ এবং অন্যান্য সেবায় কাজে নিয়োগ দিতে পারছে না। নারীদের কর্মক্ষেত্রে কম সুযোগ আরেকটি চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেরই চাকরি করা নারীর সংখ্যা বিশ্বে সর্বনিম্ন, বা ৪০ শতাংশেরও নিচে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম হওয়ায় কৃষির বাইরে অন্য খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। পাশাপাশি গুণগতমানের বিনিয়োগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর ফলে শ্রম বাজারে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে তৈরি পোশাক খাতে। ৪০ লাখের বেশি শ্রমিকের ৬৫ শতাংশই নারী। অথচ পাঁচ বছর আগেও পোশাক খাতের শ্রমিকদের ৮০ শতাংশই ছিল নারী। শুধু তৈরি পোশাক শিল্পেই নয়, সার্বিক ভাবে কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। যা এখন ৪০ শতাংশের কম। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, আমরা শিল্প ও সেবা খাতের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তৈরি পোশাক খাতে অটোমেশন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার ছিল ৬০ শতাংশ। যার মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতে ৪০ শতাংশ এবং কৃষি খাতে ২০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, কৃষি খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। তবে শিল্প ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৭ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ বার্নাড হেভেন বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল হতে পারে। এতে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি কঠিন হবে। আমার মনে তখন জিএসপি প্লাস পাওয়াও খুব বেশি জটিল হবে। এসব কিছু বিবেচনা করে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও কর্মসংস্থান কমেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করা হয়। যার আওতায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। এর বাইরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি খাতেও কর্মসংস্থান কমেছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবং সেটা হয়তো আমরা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখতে চাইব। সামষ্টিক অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। আমরা কর্মসংস্থান, কর্মক্ষেত্র বাড়ানো, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার অনেকগুলো দিক আছে। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অস্থিতিশীল বিনিময় হারের বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মধ্যে কর্মসংস্থানে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নেপাল। দেশটির কর্মসংস্থানের হার ৭২ শতাংশ। আর ভারতের কর্মসংস্থান বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা বেশি ৬২ শতাংশ। একইভাবে শ্রীলঙ্কার কর্মসংস্থান ৫৮ শতাংশ এবং মালদ্বীপের ৪৭ শতাংশ। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতে অটোমেশনের কারণে নারীর কর্মসংস্থান কিছুটা কমেছে। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়াতে পুনঃ দক্ষতা ও উচ্চতর দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এই দক্ষতা না বাড়াতে পারলে কর্মসংস্থান অনেক বড় ঝুঁকিতে পড়বে। এ ছাড়া দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিশেষ কোটার ব্যবস্থা রাখা উচিত। কর্মের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর