বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বুলেটপ্রুফ জারে ৬০ কোটি টাকার সাপের বিষ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশেষভাবে তৈরি ছয়টি বুলেটপ্রুফ কাচের জার। প্রতিটি গোল্ড প্লেটেড চেইনে ঝোলানো চামড়ার ট্যাগ। তাতে লেখা রয়েছে, কোবরা এস.সি। রেড ড্রাগন কোম্পানি। মেইড ইন ফ্রান্স। কোড নম্বর-৬০৯৭। ভয়ংকর কোবরা সাপের বিষ বলে কথা। এগুলো বিক্রির জন্য মজুদ করা হয়েছে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর স্কোয়াড্রন লিডার তারিক উল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অভিযান চালায়। ছয়টি জারে রাখা ১০ কেজি সাপের বিষের সঙ্গে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল এবং ছয় রাউন্ড গুলি। গ্রেফতার করা হয় চারজনকে। গ্রেফতাররা হলেন- এনামুল হক (৫৪), সফিকুল ইসলাম (৫৪), এরশাদ আলী (৩৬) ও সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (৩৪)। র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই চক্রের মূল দুই হোতাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারিনি। যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা মূলত কেরিয়ার। কোবরা সাপের বিষ নামে উদ্ধার হওয়া বস্তুগুলো ভুয়া। র‌্যাবের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ইতোমধ্যে সেগুলো পরীক্ষা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলোর গন্তব্য কোথায় ছিল তা আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। মূল দুই হোতাকে গ্রেফতারের পরই বিষয়টি সম্পর্কে আমরা বলতে পারব। জানা গেছে, গ্রেফতারদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে সাপের বিষসংক্রান্ত সিডি এবং বিষের ম্যানুয়াল বই উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব জানতে পারে, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে সাপের বিষের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেশি মুনাফার লোভে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাপের বিষ সংগ্রহ করে চোরাচালান করা হয়। গ্রেফতাররা মূলত ক্যারিয়ার। কথিত সাপের বিষ বিক্রির পর তারা ১ কোটি টাকা পাবেন এমন আশ্বাস দিয়েছিল তারা। পলাতক দুই ব্যক্তির একজন চট্টগ্রাম এলাকার। গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে সাপের বিষ এ দেশে ঢুকেছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে টার্গেট করেই তারা ক্রেতা খুঁজছিল। কারণ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এসব সাপের বিষ লাখ লাখ টাকা দিয়ে কেনে। কারণ বৈধভাবে দেশের বাইরে থেকে এসব সাপের বিষ আনতে আরও কয়েক গুণ বেশি টাকা গুণতে হয়।

ক্রেতাকে বিশ্বাস করাতে যা করা হয় : সাপের বিষ অরিজিনাল প্রমাণের জন্য প্রতারক চক্রটি বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে। তারা ক্রেতাদের বলছিল, পিস্তল দিয়ে সাপের বিষের কৌটায় ফায়ার করলে কৌটাটি ফাটবে না। আর বিষ নকল হলে কৌটাটি ফেটে যাবে। তারা আরও বলে অরিজিনাল বিষ স্বচ্ছ কাচের জারে রাখার পর এর ওপর লেজার লাইট ধরলে একপাশ থেকে অন্য পাশে যাবে না। এ ছাড়া তারা ক্রেতাদের তাদের কাছে থাকা বিভিন্ন বই, অ্যালবাম ও সিডি দেখায়। যেগুলোতে বিষ কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে এবং কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেসব লেখা থাকে।

 

সর্বশেষ খবর