বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

পর্নোগ্রাফিতে শিশু সাহিত্যিক গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধি

টি আই এম ফকরুজ্জামান এক সময়কার খুব জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক। তিনি টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত। বেশ কয়েকটি ছড়ার বই ছাড়াও ‘হরর ক্লাব’ নামে শিশুদের জন্য লিখেছেন সিরিজ বই। আলোকচিত্রী হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। এসবের আড়ালে আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। ছিন্নমূল শিশুদের প্রলোভনে ফেলে তৈরি করেন পর্নোগ্রাফি ভিডিও। অনেক দেশে তালিকাভুক্ত হন শিশু পর্নোগ্রাফি অপরাধী হিসেবে। এই অপরাধে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করেন। কিন্তু স্বভাব পাল্টাননি। জেল থেকে বেরিয়ে আবারও শুরু করেন পর্নোগ্রাফি ভিডিও বানানো ও বিদেশে বিভিন্ন চক্রের কাছে বিক্রি করা। আবারও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে কামরুল ইসলাম নামে এক সহযোগীসহ টিপু কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার সব ডিভাইস ফরেনসিক করে ২৫ হাজার আপত্তিকর ছবি ও ১ হাজার ভিডিও পাওয়া গেছে। যেখানে ২৫-৩০ জন শিশুকে ভিকটিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিশু পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট তৈরি ও পাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০১৪ সালের জুনে প্রথম টিপু কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে। ২০২১ সালে তিনি কারামুক্ত হন। রাজধানীর গুলিস্তান, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের ছিন্নমূল শিশুদের অর্থের প্রলোভনে পর্নোগ্রাফিতে যুক্ত করতেন টিপু কিবরিয়া। কখনো বাসায় নিয়ে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আন্তর্জাতিক চক্রের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। কখনো চক্রের চাহিদা অনুযায়ী শিশুদের বন-জঙ্গলে নিয়েও ভিডিও ধারণ করতেন। তার বাসায় পর্নোগ্রাফির ভিডিও এডিটিং প্যানেল আছে। সেখানে এডিট করে মেইলে পাঠাতেন, যা পরে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হতো। তিনি আরও বলেন, আগে ইমেইলে ভিডিও পাঠালেও পরে মেগা ও টোটেনা নামে অ্যাপসের মাধ্যমে চক্রের কাছে কনটেন্ট পাঠানো হতো। টিপু কিবরিয়ার কাছ থেকে যে ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ আরও অনেক দেশের গ্রাহকের তালিকা পাওয়া গেছে। যাদের কাছে তিনি ভিডিও কনটেন্ট পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন। তিনি বলেন, তার কাছ থেকে উদ্ধার সব ডিভাইস ফরেনসিক করে আমরা এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ছবি ও ১ হাজার ভিডিও পেয়েছি। ফরেনসিক বা ফিল্টারিংয়ের কাজ শেষ হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছবি বা ভিডিও ধারণের বিনিময়ে তিনি শিশুদের ৫০০ বা ১ হাজার টাকা দিতেন। কামরুল ছাড়া তার আরও অনেক সহযোগীর নাম আমরা পেয়েছি। তাদের দুজনকে গ্রেফতারের সময় ভুক্তভোগী এক শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কনটেন্টের বিনিময়ে টিপু কিবরিয়ার কী পরিমাণ টাকা পেতেন, কীভাবে পেতেন জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, টাকার লেনদেন হতো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও কিছু মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে। তিন থেকে চারটি ছোট ছোট ভিডিও পাঠালে তিনি পেতেন হাজার ডলার। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার এজেন্ট রয়েছে। বেশ কজন এজেন্টকে শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো শিশু শনাক্ত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা সব ছেলে। সংখ্যা অনেক।

সর্বশেষ খবর