শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

কালোবাজারে ট্রেনের টিকিটের ছড়াছড়ি

♦ তিন গুণ দামে বিক্রি ♦ ফেসবুকে চলে বিজ্ঞাপন

আবির আব্দুল্লাহ

উৎসব কিংবা লম্বা ছুটিতে ট্রেনের টিকিট হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। স্টেশনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা অনলাইনে চেষ্টা করেও মেলে না কাক্সিক্ষত টিকিট। কালোবাজারির দৌরাত্ম্যে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। অথচ স্টেশনের বাইরে চা-পানের দোকান, ফার্মেসি, ফটোকপির দোকানসহ প্রায় সব দোকানেই পাওয়া যায় ট্রেনের টিকিট। তবে এসব টিকিট সংগ্রহ করতে তিন গুণ মূল্য গুনতে হয়।

ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদযাত্রায় বা অন্য কোনো উৎসবে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর আধা ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময় ধরে সার্ভারে ঢোকা যায় না। এরপর সার্ভারে ঢোকা গেলেও দেখা যায় সব টিকিট বিক্রি শেষ। এ ক্ষেত্রে টিকিট বিক্রির সার্ভারটি ইচ্ছা করে ডাউন করে রাখা হয়। পাশাপাশি টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট সংগ্রহ করে তা স্টেশনে, ফেসবুকে কিংবা নানা মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রের সদস্যরা নিজেদের আত্মীয়স্বজন, স্টেশনের ক্লিনার, লাইনম্যান, কলেজ শিক্ষার্থী, ভিখারীদের মাধ্যমে অনলাইন কিংবা কাউন্টার থেকেই টিকিট সংগ্রহ করে। পরে টিকিট প্রতি ২০০ টাকা লাভ রেখে তা আরেক চক্রের কাছে বিক্রি করা হয়। দ্বিতীয় চক্রটি বিভিন্ন মাধ্যমে দুই থেকে তিনগুণ দামে টিকিটগুলো বিক্রি করে। এই চক্রের সদস্যদের মধ্যে স্টেশনসংলগ্ন এলাকার চা-পানের দোকান, ফার্মেসি, ফটোকপির দোকানের কর্মচারী, স্টেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও লাইনম্যানরা রয়েছে। কোনো যাত্রী টিকিট না পেলে গোপনে যোগাযোগ করে তার হাতে টিকিট ধরিয়ে দেয় তারা। এ ছাড়াও জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককেও টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করে চক্রটি। ফেসবুকে টিকিট বিক্রির পোস্ট দেখে এই প্রতিবেদকের কথা হয় দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার এক জালিয়াতের সঙ্গে। ২০ এপ্রিলের পার্বতীপুর থেকে ঢাকার ৪টি টিকিট চাইলে তিনি বলেন, ‘টিকিট দেওয়া যাবে। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে দুটি এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি শোভন চেয়ার সিট হবে। তবে ভাড়া অনেক বেশি। দামাদামি করার কোনো সুযোগ নেই।’ টিকিটের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি টিকিটের মূল্য এক হাজার টাকা। অথচ কাউন্টারে এ টিকিটের দাম ৪৬০ টাকা। সাফওয়ান রহমান নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি দুই দিন অনলাইনে চেষ্টা করেও ঢাকা যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করতে পারিনি। পরে ফেসবুকে ট্রেনের টিকিট বিক্রির একটি পোস্ট দেখে সেখানে ফোন দিলে রেলস্টেশনে আসতে বলে। এসে দেখি টিকিটের দাম তিনগুণ বেশি। জানতে চাইলে বলে নিলে নেন না নিলে এটাও পাবেন না।’ এ ছাড়াও অনলাইন টিকিট এডিটের মাধ্যমে জাল টিকিট তৈরি করে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে আরেকটি চক্র। জানা যায়, এনআইডি কার্ড, মোবাইল নম্বর অথবা অনলাইনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আন্তঃনগর ট্রেনের সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারেন। কিন্তু টিকিট কালোবাজারিরা একটি প্রাপ্তবয়স্ক ও তিনটি অপ্রাপ্ত বয়স্কসহ মোট চারটি টিকিট কেটে নিচ্ছে। পরবর্তীতে কম্পিউটারের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিটগুলো অন্য নামের এনআইডি নম্বর, মোবাইল নম্বর, প্রাপ্ত বয়স্ক টিকিটের মূল্য বসিয়ে অনলাইনের বিক্রি করে। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে অধিক মূল্যে এসব জাল টিকিট কিনছে কালোবাজারিদের কাছ থেকে। রেলওয়ের টিকিটিং পার্টনার সহজ ভিনসেন জেভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ দেবনাথ বলেন, অনলাইন টিকিটের সার্ভারে বর্তমানে কোনো সমস্যা নেই। আর যাত্রীরাও এ ব্যাপারের কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) এ এম সালাহ উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টিকিট জালিয়াতি রোধ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রতিদিনের বিক্রীত টিকিটের সব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে দেখতে পারবে কোন টিকিট কার এনআইডি দিয়ে কাটা হয়েছে। টিকিট জালিয়াতি চক্রকে রোধ করতে হলে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর