বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের অধিকাংশ রপ্তানি হয় ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দায় এ দুই বাজারে গত বছর পোশাক রপ্তানি কমেছে। তবে গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও তুরস্কের বাজারে রপ্তানি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছিল। কিন্তু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে এ খাতের রপ্তানির আদেশ কমার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএ তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আরব আমিরাতে বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সৌদি আরবে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল। এর মধ্যে নতুন বাজারে রপ্তানি হয় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক। নতুন করে এ অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে গ্যাস, জ্বালানি তেলের দাম ও উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, কমবে ক্রয়াদেশ।
পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এ অঞ্চলটিতে নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব বাণিজ্য সংকটে পড়বে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফলে এ খাতের রপ্তানির আদেশ কমার ও পোশাক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়ালে শুধু পণ্য পরিবহনে সংকট নয়, গ্যাসসহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে, বাড়বে উৎপাদন ব্যয়ও। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, প্রচলিত বাজারে ক্রয়াদেশ ওঠানামা করছে। এ সময়ে নতুন বাজার টিকে থাকার লড়াইকে সহজ করছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে রপ্তানি বাড়ে যথাক্রমে ৩৭ ও ৪৭ শতাংশ। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাবনাময় বাজারসহ তৈরি পোশাক রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে দুবাই আমাদের জন্য একটা বিজনেস হাব হিসেবে পরিচিত। এখান থেকে ইরাক, ইরান, জর্ডান, লেবাননে আমাদের মালামাল বিতরণ হয়। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বেধে গেলে এ বাজারসহ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের বড় ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পর থেকেই আমরা একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এর সঙ্গে নতুন করে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বেধে গেলে আমাদের জন্য টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা নতুন করে শঙ্কায় আছি। তখন তেলের দাম বাড়বে, সঙ্গে জাহাজের খরচ বাড়বে। পরিবহন ব্যয়ও বাড়বে।জানা গেছে, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে পণ্য পৌঁছাতে সুয়েজ খাল ব্যবহার করা হয়। পরিবহন ব্যয়ের ক্ষেত্রেও যা সাশ্রয়ী। এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুয়েজ খাল হয়ে স্বল্প পথের ব্যবধানে লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ খালের মাধ্যমে লোহিত সাগর দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বন্দরে পৌঁছে। এতে সময় বাঁচে অন্তত ১৫ দিন। এই রুট ব্যবহার করতে না পারলে বিকল্প দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে ইউরোপে যেতে হবে। এতে অতিরিক্ত সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে সময় লাগে অতিরিক্ত ১৫ দিন। যার ফলে পরিবহন খরচও বৃদ্ধি পায়।