সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেশীয় বীজের সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়লেন গ্রামের নারীরা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

দেশীয় বীজের সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়লেন গ্রামের নারীরা

গ্রামের প্রতিটি বাড়িই যেন দেশীয় বীজের সমৃদ্ধ ভান্ডার। পেয়ারা, তেঁতুল, আমলকী, লিচু, বকুল, বড় জাম, খুদে জাম, লেবু, গাব, খেজুর প্লাস্টিকের কৌটা আর মাটির পাত্রে থরে থরে সাজানো শত শত ফল ও সবজির বীজ। রয়েছে বালাম, রানী স্যালুটসহ সুগন্ধি নানা জাতের ধান ও তরমুজের বীজ। খুলনার বটিয়াঘাটার সুকদাড়া গ্রামে নারী উদ্যোক্তা করুণা মন্ডল এভাবে প্রায় ৭-৮ বছর ধরে ফল ও সবজির বীজ সংরক্ষণ করছেন। আংশিক লবণাক্ত জমিতে প্রতিবছর তার সংগ্রহ করা বীজ থেকে চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন গ্রামের চাষিরা। জানা যায়, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী করুণা মন্ডল গ্রামের অন্য নারীদের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন। তিনি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া সবজি চাষ করেন। তাকে দেখে কয়েকটি গ্রামের শতাধিক নারী বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন।

স্থানীয় কৃষি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান লোকজ-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মিলন কান্তি মন্ডল জানান, বটিয়াঘাটার সুকদাড়া, ঝড়ভাঙ্গা, বিত্তিশলুয়া, টেংরামারি, কাতিয়ানাংলাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ৪০টি কৃষক দল আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ নারী কৃষক দল দেশীয় বীজ সংরক্ষণ, বিনিময় করা ও বীজ মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। উদ্যোক্তা বীজ সংরক্ষক করুণা মন্ডল বলেন, স্থানীয় জাতের বীজে উৎপাদিত ফল শাকসবজির স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি। হাইব্রিড জাতের বীজ থেকে পাওয়া ফল শাকসবজির তুলনায় এর উৎপাদন ক্ষমতাও ভালো।

তিনি বলেন, লবণাক্ত এলাকায় বিদেশি প্রজাতির বীজে ফসল ভালো হয় না। অনেকক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিদেশি জাতের বীজের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। বাজারে বীজের দামও বেশি। এ কারণে তিনি জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বিভিন্ন দেশীয় বীজ সংগ্রহ শুরু করেন।

মাঝে মধ্যে প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মাঝে তিনি বীজ সরবরাহ করেন। এতে তাদের সঙ্গে সম্পর্কও ভালো থাকে। তার গ্রামে অন্তত ২০ জন নারী বীজ সংরক্ষণ করেন ও তারা প্রতিবছর এ বীজ নিয়ে লোকজ আয়োজিত বীজ মেলায় অংশ নেন। সেখানে কিছু বীজ কেনাবেচা হয়। কিছু বীজ নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করেন। বাজার থেকে কোনো বীজ কিনতে হয় না।

লোকজ সমন্বয়কারী পলাশ কুমার দাস বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির হাইব্রিড বীজের চাপে একসময় স্থানীয় জাতের অনেক বীজ হারিয়ে যেতে থাকে। বিষয়টির গুরুত্ব উপলদ্ধি করে স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ করা হয়। স্থানীয় জাতের বীজ বংশপরম্পরায় পরিবারের কাছে সংরক্ষিত থাকে। সেই এলাকার বিশেষ জলবায়ুর সঙ্গে বীজের অভিযোজন ক্ষমতাও থাকে।

তিনি বলেন, এখন বটিয়াঘাটার শতাধিক নারী স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ করেন। যাদের মধ্যে অনেকেরই ৪ শতাধিক জাতের ফল ঔষধি সবজি বীজ রয়েছে। কৃষিখাতে জলবায়ুু পরিবর্তন ক্ষতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রজাতির বীজ সংরক্ষণ ও গবেষণা করা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ খবর