তীব্র গরমে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায় হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুল। নেই বানরের লাফালাফি, বাঘের হুংকার, হাতিদের খেলা। চাঞ্চল্য হারিয়েছে যেন সব পশুপাখি। দর্শনার্থীর সংখ্যাও হাতে গোনা। মাঝে-মধ্যে ময়ূরের একটা দুইটা ডাক ছাড়া চিড়িয়াখানাজুড়ে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। গতকাল রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
ভিতরে ঢুকতেই বাম পাশে চোখে পড়ে হরিণের দল। আরও একটু সামনে বানরের খাঁচা। অলস সময় কাটাচ্ছে তারা। দেখা যায়নি চিরচেনা প্রাণচাঞ্চল্য। রেসাস বানরের বিরাট খাঁচাটি প্রায় শূন্য। বেশির ভাগ বানরই বেষ্টনীর টিনের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। কোনো কোনো মা বানর তার বাচ্চাকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পানিতে। প্রিয় বাদামও আর তাদের টানছে না। গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে শত শত হরিণ। রোদের খরতাপে পাখিদেরও বেড়েছে অস্বস্তি। পানির ঝাপটায় ঝিমাচ্ছে উটপাখির দল। ম্যাকাওয়ের ডাক শুনতে পাওয়া যায়নি এদিন। টানা অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মাংসাশী প্রাণীগুলো বেশ দুর্ভোগে পড়েছে। বাঘের খাঁচার ভিতরে জলাধারে শুয়ে থাকতে দেখা যায় বাঘ যুগলকে। নেই কোনো হুংকার। এমনকি সামনে পড়ে থাকা মাংসের চাকা ছুঁয়েও দেখছে না তারা। গড়িয়াল এবং কুমিরকে খুঁজে পাওয়াই যাচ্ছিল না। তীব্র গরমে জলাধারের তিন ফুট গভীরে নিজেদের নিরাপদ মনে করছে গড়িয়াল-কুমিররা। চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, সব প্রাণীই রীতিমতো দুর্বল হয়ে পড়েছে চলমান দাবদাহে। প্রায় সব প্রাণীর খাবার গ্রহণে অনীহা। তবে এসবের মাঝেও একটু ব্যতিক্রম সিংহযুগল। চিড়িয়াখানার উত্তরে আফ্রিকান সিংহ দুটিকে খাঁচার বাইরে বেষ্টনীর ভিতরে খেলা করতে দেখা গেছে। আবার গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য ঘাসের ওপর গড়াগড়ি খেতেও দেখা যায় তাদের। অতিরিক্ত গরমের কারণে চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীর চাপও অনেক কম। তবে তা উপেক্ষা করে এসেছেন কেউ কেউ। তবে হাতে গোনা এসব দর্শনার্থীর বেশির ভাগই প্রেমিকযুগল।
এদিন উল্লুকের খাঁচার সামনে গেলে ভেংচি কাটতে দেখা যায়নি প্রাণীটিকে। চুপচাপ শুয়ে-বসে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। আরেকটু সামনে এগোলেই ইমু পাখির খাঁচা। সেখানেও একই চিত্র। জলাধারে নামছে-উঠছে ইমু পাখিরা।![](/assets/archive/images/Print-Edition/2024/04.April/30-04-2024/BD-Pratidin_2024-04-30-13.jpg)
তীব্র গরমে পশুপাখিদের যাতে ক্ষতি না হয় তাই আগে থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে হয় কর্তৃপক্ষকে। সব পশুপাখির খাঁচায় বালতি ও গামলায় করে বাড়তি পানি দেওয়া রয়েছে। হাতিদের ঘরে দেখা যায় তারা লম্বা শুঁড় দিয়ে পানি ভরে নিজেদের ভিজিয়ে নিচ্ছে বারবার। মাহুত জানায়, দিনে কমপক্ষে তিনবার গোসল করানো হয় হাতির পালকে। এখন পর্যন্ত জাতীয় চিড়িয়াখানায় কোনো পশুপাখি অসুস্থ হয়নি। কোনো পশুপাখি মারাও যায়নি।
পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছেন সালমা। তিনি বলেন, আমরা আশুলিয়া থেকে এসেছি। ছেলেকে বলছিলাম এ সময়ে ভিড় কম হবে। কিন্তু তীব্র গরমে পশুপাখির দেখা সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। পশুপাখি সব খাঁচার ভিতরে ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা বের হচ্ছে না। তাই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত গরমে পশুপাখির যত্নের প্রতি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে বলে জানান চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তীব্র গরমে প্রাণী ও পাখিদের বাড়তি যত্ন নিয়ে থাকি আমরা। কিছুক্ষণ পরপর ঠান্ডা পানির পাশাপাশি সাধারণ তাপমাত্রার পানি দেওয়া হচ্ছে। পশুপাখির সামনে ভিটামিন সি ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। এনক্লোজারের পানি বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে। তিন থেকে পাঁচবার প্রতিদিন গোসল করানো হচ্ছে প্রাণীদের। জাতীয় চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৩৭টি প্রজাতির ৩ হাজার ৩০০ প্রাণী রয়েছে।