মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কতদূর এগোল রানওয়ে নির্মাণকাজ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কতদূর এগোল রানওয়ে নির্মাণকাজ

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাড়ছে ফ্লাইটের সংখ্যা, বাড়ছে যাত্রীর চাপ। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়বে। এ সমস্যা নিরসনে আরেকটি ডিপেন্ডেবল রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে আগামী বছর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাপানি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক সমীক্ষা করেছিল। এখন চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য বুয়েটের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। এরপর ডিপিপি তৈরি করে অর্থের জোগানের চেষ্টা করা হবে। এখন সরকারের অনুমোদন নিয়ে আমাদের আশা যে আগামী বছর কাজটা শুরু করতে পারব। আমাদের পরিকল্পনা থার্ড টার্মিনাল ফাংশনিং হয়ে গেলে এই রানওয়ের কাজ শুরু করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা অনেক বাড়বে। একটা রানওয়ে দিয়ে এত বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আরেকটি রানওয়ে তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটা আলাদা ফুলফেজের ইনডিপেনডেন্ট রানওয়ে হবে না, এটা হবে ডিপেনডেন্ট রানওয়ে। অর্থাৎ একটা রানওয়ে দিয়ে ফ্লাইট ওঠানামার সময় আরেকটি বন্ধ থাকবে। দুটি রানওয়ের সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এভাবে রানওয়ে নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ে তৈরির এমন উদ্যোগ এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালেও নেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, এই বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) নিয়ম অনুসারে, উড়োজাহাজ নিরাপদে ওঠানামা করতে দুটি রানওয়ের মধ্যে অন্তত ৭৫০ ফুট দূরত্ব থাকতে হয়। ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং বা আইএলএস ব্যবহার করে ফ্লাইট ওঠানামার ক্ষেত্রে এই দূরত্ব আরও বেশি রাখতে হয়। এই দূরত্ব মেনে আলাদা রানওয়ে তৈরি ‘সম্ভব নয়’ বলে আগের উদ্যোগগুলো থেকে জানা গিয়েছিল। গত বছরের ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আংশিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে পুরোপুরি কার্যকর হতে এ বছরের ডিসেম্বর লাগতে পারে। এমনিতে ফ্লাইটগুলোকে উড্ডয়নের জন্য ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এই অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হবে। সমস্যা নিরসনে বিকল্প রানওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি বিমানবন্দরে একাধিক রানওয়ে থাকলে একটি থেকে অপরটি নির্ধারিত দূরত্বে স্থাপন করতে হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরে সে পরিমাণ জায়গা না থাকায় বাড়তি ফ্লাইটের চাপ সামলাতে ডিপেনডেবল রানওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে একই সময়ে মূল রানওয়ে এবং ডিপেনডেবল রানওয়েতে উড়োজাহাজ ওঠানামা করার সুযোগ নেই। মূল রানওয়েতে যখন ফ্লাইট ওঠানামা করবে, সে সময় ডিপেনডেবল রানওয়েতে ফ্লাইট উড্ডয়নের জন্য অপেক্ষা করবে। একই সঙ্গে মূল রানওয়ে থেকে উড়োজাহাজ দ্রুত সময়ে অ্যাপ্রোনে যেতে হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়েও নির্মাণ করা হয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দরে। জানা গেছে, বর্তমানে দেশি-বিদেশি ৩৩টি এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিদ্যমান একটি রানওয়ে ব্যবহার করে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে। ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে এক দিনে। ফলে প্রায় পিক আওয়ারে একই সময়ে একাধিক ফ্লাইট থাকলে টেক অফের জন্য উড়োজাহাজগুলোকে সিরিয়াল ধরে অপেক্ষা করতে হয়। ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি না পেলে আকাশে গো অ্যারাউন্ড করতে হয়। এতে এয়ারলাইনসগুলোর জ্বালানি খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতেও বেগ পেতে হয়। থার্ড টার্মিনাল চালুর অপেক্ষায় রয়েছে বিদেশি এক ডজন এয়ারলাইনস। তখন চাপ আরও বাড়বে। এই রানওয়ে নির্মাণ হলে সেবায় গতি আসবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

 

সর্বশেষ খবর