শিরোনাম
বুধবার, ১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

দাবদাহে পুড়ছে যত স্বপ্ন

♦ পঞ্চগড় শ্রীমঙ্গলে মরে যাচ্ছে চা বাগান আসছে না নতুন কুঁড়ি ♦ খরার কবলে মেহেরপুওে বোরোর আবাদ ♦ বগুড়ায় নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল

প্রতিদিন ডেস্ক

দাবদাহে পুড়ছে যত স্বপ্ন

মেহেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ধান খেত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

খরার কবলে পড়েছে মেহেরপুরের বোরো ধানের আবাদ। বগুড়ায় খরতাপে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল। পঞ্চগড়ে মরে যাচ্ছে চা বাগান। খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পানি দিচ্ছে না চাষি। শ্রীমঙ্গলে চা গাছে আসছে না নতুন কুঁড়ি, শুকিয়ে যাচ্ছে পাতা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মেহেরপুর : মেহেরপুর জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৯৭ হেক্টর। বর্তমানে ধানে থোড় থেকে শীষে রূপ নিয়েছে। এমন সময় খরার কবলে পড়েছে বোরো আবাদ। জমির মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। মাটি শুকনা থাকায় দ্রুত শুষে নিচ্ছে পানি। জমিতে প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। শ্যালো মেশিনেও পানি উঠছে    কম। সময় বেশি লাগায় দুই লিটার ডিজেলের পরিবর্তে কোনো কোনো জমিতে প্রতিদিন তিন-চার লিটার করে ডিজেল খরচ হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। পোকার আক্রমণও বেড়েছে। কাজ হচ্ছে না বিষ দিয়েও।

চাষিরা জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে ধান চিটা হচ্ছে। মাঠে পানি রাখা যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে এক বিঘা জমিতে ২৫-২৬ হাজার টাকা খরচ হয়। এবার পানির কারণে খরচ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়বে। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, কিছু শীষ মরে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেচ দিয়ে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি জমিয়ে রাখা এবং কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বগুড়া : বগুড়ার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকের ফসল পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। শুকিয়ে গেছে ফসলি জমি। কোথাও কোথাও মাটি ফেটে চৌচির। তীব্র খরায় পুড়ছে পাট, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, পেঁপে, পটোল, করলা ও ভুট্টাসহ অন্যান্য সবজির খেত। এপ্রিলের শুরু থেকেই দেখা নেই বৃষ্টির। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন মরিচ চাষিরা। ফসল বাঁচাতে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পাম্পের সেচসহ কৃষককে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষকরা বলছেন, এপ্রিলের তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি লাউয়ের আবাদ করেছেন। গাছ শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান জানান, অনেক জায়গায় খাল-বিল নদী-নালা শুকিয়ে গেছে। পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে।

পঞ্চগড় : পঞ্চগড় জেলায় প্রায় আট মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষিতে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাটি শুকিয়ে মরে যাচ্ছে চা বাগান। কাঁচা চা পাতার মূল্য কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় চা বাগানে সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছেন চাষিরা। ক্ষুদ্র চা চাষিরা বলছেন, অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরতাপে মাটি শুকিয়ে লাল হয়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাত মাস এই জেলায় ভারী বৃষ্টি হয়নি। চাষিরা বলছেন, পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। সেচের পানি জমিগুলো ধরে রাখতে পারছে না।

শ্রীমঙ্গলে তীব্র গরমে চা গাছ শুকিয়ে গেছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নতুন কুঁড়ি আসছে না চা গাছে। শুকিয়ে যাচ্ছে পাতা। গাছে ধরেছে রেড স্পাইডারের (লাল রোগ) আক্রমণ। এ ধারা চলতে থাকলে উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা করছেন চা সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশি চা শিল্পের সিলেট বিভাগীয় চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলী বলেন, ‘চা শিল্প এখন সংকট ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’ চা বিজ্ঞানীরা জানান, এখন চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসার সময়। এই সময়ে ১৫ দিনে আড়াই সেন্টিমিটার বৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা দরকার। এর ওপরে গেলেই খরায় পড়ে চা গাছ। এক সপ্তাহ ধরে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। এতে চা বাগানের মাটি থেকে পানি জ্বলীয় বাষ্প হয়ে যাচ্ছে। চা গাছের পাতা দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছে। কোথাও চায়ের পাতা শুকিয়ে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে, কোথাও পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে। চা শ্রমিক মিতা গোয়ালা বলেন, এখন নতুন পাতায় হাত ভরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘বাঞ্জি দশা’য় আক্রান্ত হওয়ায় পাতা তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। পাতা কম তুলায় প্রতিদিনের হারিজাও কম পাচ্ছি। মহসীন টি হোল্ডিং কোম্পানি লি.-এর ফ্যাক্টরি ব্যবস্থাপক ফয়সল আহমেদ বলেন, খরার কারণে গাছে পাতা আসছে না। আর এক সাপ্তাহ বৃষ্টি না হলে গাছে কোনো পাতাই থাকবে না। এম আর খান চা বাগানের মালিক সিরাজুল ইসলার চৌধুরী বলেন, অনেক বাগানে কৃত্রিমভাবে পানি দিয়ে চা গাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা করা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বিপ্লব কুমার দাশ বলেন, চলমান এই তাপদাহ আরও এক সপ্তাহ থাকবে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, চা গাছ মরে যাচ্ছে। আমরা বাগান মালিকদের সেচ ব্যবস্থা বাড়াতে বলেছি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর