বুধবার, ১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
নিউইয়র্কে দুই বাংলাদেশি খুন

যুবক রিমান্ডে উদ্ধার স্বয়ংক্রিয় রাইফেল

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্ক স্টেটের বাফেলোয় দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক ৩১ বছর বয়সী ড্যাল ও কিউমিংসকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছেন বাফেলো এরিক কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মাইকেল জে কিন। ২৯ এপ্রিল সোমবার অপরাহ্ণে বাফেলো সিটির মেয়র বাইরেন ডব্লিউ ব্রাউন ও বাফেলো পুলিশ কমিশনার জোসেফ গ্রেমাগলিয়াকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আরও জানান, গ্রেফতার যুবকের কাছে একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল পাওয়া গেছে। সেটি বেআইনিভাবে তার দখলে ছিল। তা পরীক্ষা করা হচ্ছে ওই হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছে কি না। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আরও জানান, ড্যাল ও কিউমিংসের বিরুদ্ধে বাফেলো ক্রিমিনাল কোর্টে বেশ কটি মামলা বিচারাধীন। তার নির্দিষ্ট ঠিকানা না থাকায় (গৃহহীন) ওইসব মামলার একটিতেও সে হাজিরা দেয়নি। এ অবস্থায় ২৭ এপ্রিল দুপুরে জিনার স্ট্রিটের ১০০ ব্লকে গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার আশপাশের ভিডিও ফুটেজে প্রায় একই সময়ে তার অস্তিত্ব দৃশ্যমান হয়েছে। পরদিন ২৮ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে বাফেলো সিটির ইস্ট ডেলাভ্যান এবং নরফোক এভিনিউ থেকে পুলিশ ড্যাল ও কিউমিংসকে গ্রেফতার করেছে। সে সময় তার কাছে গুলিভর্তি রাইফেলসহ ভয়ংকর কিছু সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। রাইফেলটি তিনি বেআইনিভাবে বহন করছিলেন। সোমবার তাকে বাফেলো সিটি কোর্টে জজ স্যামুয়েল পি ডেভিসের এজলাসে সোপর্দ করা হয়। সে সময় আদালত তাকে জামিনহীন আটকাদেশ দেন। একই সঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মে সকাল পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেআইনিভাবে এ অস্ত্র রাখা ও বহনের মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি উল্লেখ করেছেন। জোড়া খুনের দায়ে জড়িত থাকলে সারা জীবন তাকে কারাগারেই কাটাতে হবে বলে এক আইনজীবী উল্লেখ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র এবং পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য থেকে জানা যায়, দুই বাংলাদেশি আবু ইউসুফ (৩৯) ও বাবুল মিয়া (৫৯) যে পরিত্যক্ত বাড়িতে কাজের জন্য গিয়েছিলেন, সেটি বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। ড্যাল ও কিউমিংস ওই বাসায় বাস করছিলেন। সেটি মেরামতের পর বিক্রি হয়ে গেলে তিনি থাকবেন কোথায়-এ আশঙ্কা থেকেই হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের গুলি করেছেন। তবে তিনি টার্গেট করে কিংবা বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে গুলি ছোড়েননি বলে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি দাবি করেন। অর্থাৎ সে সময় অন্য কেউ গেলেও গুলিবিদ্ধ হতেন। পুলিশ কমিশনার জানান, গুলির শব্দ পেয়েই ৯১১-এ ফোন করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে টহল পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখেন একজন মারা গেছেন, আরেকজনকে গুরুতর অবস্থায় নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি উল্লেখ করেন, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সেজন্য তিনি গ্রেফতার ব্যক্তির ছবি প্রকাশে সম্মত হননি। যদিও আগেই ড্যাল ও কিউমিংসের সন্ধান চেয়ে সাড়ে ৭ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে এলাকায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছিল। জোড়া খুনের মামলাটি তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ক্রিস্টোফার এস সাফোকো এবং বাফেলো পুলিশের হোমিসাইড ব্যুরোর চিফ গ্যারি ডব্লিউ হ্যাকবুশ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুলিতে নিহত সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ইউসুফ সাত সন্তানের জনক। আরেকজন কুমিল্লার বাবুল মিয়ার দুই সন্তান এবং তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। উভয়ের স্ত্রী এখন শিশু সন্তান নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় রয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৩৯০ মাইল দূর বাফেলো হচ্ছে বিশ্বখ্যাত নায়াগ্রা ফলস্ সংলগ্ন এবং কানাডা সীমন্তঘেঁষা একটি পিছিয়ে পড়া জনপদ। সাম্প্রতিক বছরে নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৪০ হাজারের অধিক বাংলাদেশি সেখানে সস্তায় বাড়ি কিনে বসতি গড়েছেন। জরাজীর্ণ বাড়িগুলো মেরামতের মাধ্যমে বাফেলো সিটির চেহারাও পাল্টে দিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। তেমনই একটি সিটিতে উঠতি কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশিরা এহেন পরিস্থিতির ভিকটিম হওয়ায় এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এ অবস্থায় কমিউনিটির নিরাপত্তার দাবি উঠেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাফেলো সিটি মেয়র বাইরেন ডব্লিউ ব্রাউন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাফেলোর আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। তারই প্রমাণ মিলল হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সন্দেহভাজন দুর্বৃত্ত গ্রেফতারে।’ এ সময় পুলিশ কমিশনার উল্লেখ করেন, পুলিশি টহল স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নই ওঠে না।

 

 

সর্বশেষ খবর