শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

পুরনো কায়দায় ইয়াবা ঢল

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

পুরনো কায়দায় ইয়াবা ঢল

পুরনো কায়দায় নতুন করে ঢল নেমেছে ইয়াবার। কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে ইয়াবার স্টমাক ক্যারিংয়ে পেয়েছে নতুন মাত্রা। তিন হাজারের অধিক ‘পেশাদার’ ইয়াবা বাহক এ দুই জেলা থেকে পুরনো পাচার পদ্ধতি অনুসরণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছে মরণনেশা ইয়াবা। সম্প্রতি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে জব্দ করা সিংহভাগ ইয়াবার চালান ছিল স্টমাক ক্যারিংয়ের। কিন্তু নানান আইনি জটিলতার কারণে পেট থেকে জব্দ করা চালানগুলো মামলায় দেখানো হয়েছে পকেট কিংবা ব্যাগ থেকে উদ্ধার হিসেবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তর অঞ্চলের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেন, ‘বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে স্টমাক ক্যারিং। প্রায়ই ইয়াবাসহ স্টমাক ক্যারিয়ার গ্রেফতার করা হয়। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে বাসের পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে ট্রেনে করেও ইয়াবা পাচার হচ্ছে।’ স্টমাক ক্যারিং নিয়ে কথা হয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- বর্তমানে যত মাদক চালান জব্দ করা হয় তার সিংহভাগই হচ্ছে স্টমাক ক্যারিং। কিন্তু নানান সীমাবদ্ধতার কারণে জব্দ করা চালানগুলো স্টমাক ক্যারিং হিসেবে দেখানো যাচ্ছে না। কারণ স্টমাক ক্যারিং হিসেবে দেখা হলে ডায়াগনস্ট্রিক সেন্টার ও হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাক্ষী করতে হয়। বাস্তবে তারা কেউই মামলার সাক্ষী হতে আগ্রহী হয় না। তাই স্টমাক ক্যারিংয়ের মামলাগুলোতে ব্যাগ বা পকেট থেকে উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয় এজাহারে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবার রাজধানী খ্যাত সান স্টেট থেকে ইয়াবার চালান বাংলাদেশি সীমান্ত এলাকায় আসার পর কক্সবাজার ও বান্দরবানের কমপক্ষে ৪৫টি পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে দেশে। অতপর ইয়াবার চালান প্রবেশের পর ৯০ শতাংশ চালান চলে যায় ৩২ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প এবং বান্দরবান ও কক্সবাজারের নির্ধারিত কিছু পয়েন্টে। মাদক ব্যবসায়ীরা ওই এলাকাগুলোকে বলে ‘গিলা পয়েন্ট’। কক্সবাজার, বান্দরবান এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে গিলা পয়েন্ট রয়েছে কমপক্ষে সাড়ে তিন শ। এর মধ্যে কক্সবাজারে রয়েছে শতাধিক গিলা পয়েন্ট। বান্দরবান এলাকায় রয়েছে কমপক্ষে ৫০ গিলা পয়েন্ট। এ ছাড়া ৩২ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে রয়েছে দুই শতাধিক গিলা পয়েন্টে। কক্সবাজারের উল্লেখযোগ্য গিলা পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে টেকনাফের হ্নীলা, জালিয়া পাড়া, হোয়াক্যং, মৌলভীবাজার, পানখালী, নোয়াখালী পাড়া। টেকনাফ সদর, রামুর গোয়ালিয়া পালং (মিনি বান্দরবন), উখিয়ার মরিচ্যা, ঈদগা চৌপলদন্ডী ব্রিজ।

 কক্সবাজার সদরের পাহাড়তলী, লাইট হাউস, টেকপাড়া, বাহারছড়া, নাজিরারটেক, সমিতি পাড়া, দনিয়ানগর, কুরুশকুল, উখিয়ার হলদিয়া পালংক, পালংখালী। গিলা পয়েন্টগুলোতে কলা ও বিশেষ গ্লিসারিন দিয়ে খাওয়ানো হয় ইয়াবার বড়ি। পরে ওই চালান চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম হয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে মাদক বহনের জন্য স্টমাক ক্যারিয়ার রয়েছে কমপক্ষে তিন হাজার। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা স্টমাক ক্যারিং করে রোহিঙ্গারা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কক্সবাজারের অধিবাসীরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, ঢাকা জেলা ও মহানগর, ফরিদপুর, গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া এবং পাবনা এলাকার বাসিন্দারাও স্টমাক ক্যারিং করে। একজন স্টোমাক ক্যারিয়ার এক চালানে সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে তিন হাজার পিস ইয়াবা বহন করে। প্রতি হাজার ইয়াবা পাচারের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন ক্যারিয়ার।

 

সর্বশেষ খবর