শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্থলভাগে জ্বালানির খোঁজে পেট্রোবাংলার তোড়জোড়

জিন্নাতুন নূর

স্থলভাগে জ্বালানির খোঁজে পেট্রোবাংলার তোড়জোড়

স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) তোড়জোড় শুরু করেছে। দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থা এই উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিন বছরে ৪৮টি কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আর চার বছরের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এই কূপগুলো খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এতে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে ৪৮ দশমিক ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

স্থলভাগে দেশে নতুন সম্ভাব্য এলাকায় গ্যাসের মজুত চিহ্নিত করতে আগামী কয়েক বছরে ১০ হাজার ২২৫ লাইন কিলোমিটার (কি.মি.) টুডি এবং ৭ হাজার ৮৫৪ বর্গ কি.মি. থ্রিডি সাইসমিক সার্ভে করা হবে। এতে খরচ হতে পারে ৩ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। বাংলাদেশের স্থলভাগে ২২টি গ্যাস ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি উন্মুক্ত রয়েছে। এই ব্লকগুলোতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ছাড়াও বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে পেট্রোবাংলা ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন ও  ওয়ার্কওভারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে ২৩টি কূপ বাপেক্স-এর রিগ দিয়ে এবং ২৫টি কূপ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শেষ করা হবে। এই ৪৮টি কূপ খনন ও  ওয়ার্কওভারের সফল সমাপ্তির পর প্রতিদিন ৬১৮ এমএমসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে ৪৮টি কূপের মধ্যে ভোলা নর্থ-২, টবগি-১, ইলিশা-১, শ্রীকাইল নর্থ-১, শরীয়তপুর-১, তিতাস-২৪, বিয়ানীবাজার-১, কৈলাশটিলা-২, সিলেট-১০, রশিদপুর-২, সুন্দলপুর-৩ এর সফল সমাপ্তি হয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে দিনে ১২৬ এমএমসিএফ গ্যাসের প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৩৩ এমএমসিএফ গ্যাস যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া কৈলাসটিলা-৮ কূপ খনন, তিতাস-১৪ এবং রশিদপুর-৫  ওয়ার্কওভার কার্যক্রম চলছে।

এদিকে কৈলাসটিলা ৮ নম্বর কূপ পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের টার্গেট দেশের ৪৬টি কূপ খনন করে প্রায় ৬০০ এমএমসিএফ গ্যাস পাইপলাইনে নিয়ে আসা। বাপেক্স যেহেতু নিজস্ব রিগ এবং জনবল দিয়ে এ কূপগুলো খনন করছে এ জন্য এ গ্যাস আহরণে আমাদের খরচ কম হবে।’ এ ছাড়াও পেট্রোবাংলা দেশের জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নতুন নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর শনাক্ত করা লিড এবং প্রসপেক্টগুলো যাচাই-বাছাই করে হাইড্রোকার্বন প্রসপেক্ট-এ রূপান্তর করা হয়েছে। কোম্পানিভিত্তিক ৬৯টি প্রসপেক্ট কূপ খননের জন্য নির্ধারণ করে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে র‌্যাংকিং করা হয়েছে। ২০২৫ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে খননের জন্য বাপেক্স ৫২টি, বিজিএফসিএল ৯টি এবং এসজিএফএল ৮টি কূপের নাম প্রস্তাব করেছে। এর সঙ্গে বাপেক্স ৯টি, বিজিএফসিএল ১২টি ও এসজিএফএল ৩টি  ওয়ার্কওভার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রস্তাবিত ৬৯টি কূপ খনন কার্যক্রম সফলভাবে শেষে জাতীয় গ্রিডে দিনে বাপেক্স ৭৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট, বিজিএফসিএল-এর মাধ্যমে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং এসজিএফএল-এর মাধ্যমে ৯০ মিলিয়ন ঘনফুটসহ মোট ৯৮৫ এমএফসিএফ হারে গ্যাস যুক্ত হবে। এর সঙ্গে বাপেক্স, বিজিএফসিএল এবং এসজিএফএল-এর মাধ্যমে প্রস্তাবিত মোট ৩১টি  ওয়ার্কওভার শেষ হলে জাতীয় গ্রিডে দিনে বাপেক্স ৩১০ মিলিয়ন, বিজিএফসিএল-এর মাধ্যমে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং এসজিএফএল-এর মাধ্যমে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুটসহ মোট ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়াও পেট্রোবাংলা ১০০টি কূপ খননের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এ কার্যক্রমে বাপেক্সের সক্ষমতাকে শতভাগ কাজে লাগিয়ে এবং বাকি অংশ আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ১০০টি কূপ খনন ও  ওয়ার্কওভার পরিচালনার জন্য প্রায় ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সরকারি অনুদান ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা (৬৯.৯৬%) এবং সংস্থার জিডিএফ এবং কোম্পানিসমূহের নিজস্ব অনুদান হবে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩০.০৪%)। পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট ২৫৩টি কূপ খনন করা হয়েছে যার মধ্যে ৭০টি কূপ বর্তমানে উৎপাদন করছে। আর ৯৮টি কূপ বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বা সাময়িক বন্ধ আছে। ৬৭টি কূপ থেকে  ওয়ার্কওভার করে আবারও উৎপাদন করা সম্ভব। আর ৩১টি কূপে আরও কার্যক্রম গ্রহণ করার সুযোগ আছে। ৯৮টি পরিত্যক্ত কূপ ৪টি শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এই কূপগুলোতে সফল  ওয়ার্কওভার শেষে জাতীয় গ্রিডে দিনে ২২০ থেকে ২৩০ এমএমসিএফ গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর