শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কংগ্রেস-বিজেপি বাগ্যুদ্ধ

কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতের চলমান লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই সংরক্ষণ (সরকারি চাকরি ও অন্যান্য সুবিধা ভোগের অধিকার) প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বাগ্যুদ্ধে নেমে পড়েছে। কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিটি সভাসমাবেশে তারা সংরক্ষণ ইস্যু হাতিয়ার করে একে অন্যকে তোপ দেগে চলেছে।

বিজেপিশাসিত রাজ্য গুজরাট কিংবা মধ্যপ্রদেশ-প্রতিটি জায়গায় নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসের সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধী বলছেন, ‘মোদি ফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় এলে সংবিধান পরিবর্তন করে দেশ থেকে সংরক্ষণ তুলে দেবেন। সংরক্ষণের প্রধান লক্ষ্য দেশের গরিব, দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হবে। দেশে যে সরকার আছে, তারা দেশের অর্থ ন্যায়ের সঙ্গে সবার মধ্যে বণ্টন করে দেবে। এটাই সংরক্ষণের মূল বিষয় হওয়া উচিত। কিন্তু সংরক্ষণকে শেষ করে দেওয়ার জন্য বেসরকারিকরণ, সেনাবাহিনীতে অগ্নিবীর প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। যেখানে সমাজের দুর্বল শ্রেণির লোক একটু সুবিধা পায় সেখানেই বিজেপির লোকেরা তাদের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।’

 অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণ নীতির অভিযোগ তুলে বলেছেন, যতদিন তিনি বেঁচে আছেন ততদিন দলিত, আদিবাসী, অন্য অনগ্রসর শ্রেণির প্রাপ্য সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে তা মুসলিমদের দিতে দেবেন না। দুই দিন আগে তেলেঙ্গানার মেদক জেলার জাহিরাবাদে নির্বাচনি প্রচারসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘যারা সংসদ চলতে দেয় না, যারা নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তোলে, যারা ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা আজ ভোটব্যাংকের কারণে সংবিধানের নিন্দা করতে নেমে পড়েছে। কিন্তু যতদিন মোদি আছে, সংবিধানের রচয়িতা বাবাসাহেব আম্বেদকর ভারতের সংবিধানে তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, অন্য অনগ্রসর শ্রেণি, দলিত মানুষকে যে সংরক্ষণ দিয়েছেন তা পুরোপুরি রক্ষা করা হবে। কখনোই তাদের ওপর কোনো আঘাত আসতে দেব না। কর্ণাটকে কংগ্রেস অন্য অনগ্রসর শ্রেণির প্রাপ্য সংরক্ষণের কোটা থেকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের সংরক্ষণ দিয়েছে। ওরা ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ চালু করেছে। ভোটব্যাংকের জন্য তারা আদিবাসী, দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষের সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিতে চায়।’

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর যখন কেন্দ্রে ওদের সরকার ছিল তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কেন্দ্রীয় সরকার ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি নোট ক্যাবিনেটে নিয়ে এসেছিল। সে নোটে বলা হয়েছিল-অন্য অনগ্রসর শ্রেণি-মন্ডল কমিশনের অধীনে যাদের ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা মেলে-সেই সংরক্ষণের একটা অংশ কেটে অর্থাৎ ২৭ শতাংশের মধ্য থেকে একটা অংশ কেটে মুসলিমদের দেওয়া হবে। এর দুই দিন পরই ২২ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার আদেশ জারি করে। কিন্তু পরে অন্ধ্রপ্রদেশ হাই কোর্ট কংগ্রেস সরকারের এ আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। পরে কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে যায় কিন্তু সেখানেও সুরাহা মেলেনি। ২০১৪ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে কংগ্রেস জানিয়েছিল-ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে আইন তৈরি করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই ২০১৪ সালে অন্য অনগ্রসর শ্রেণি, দলিত, আদিবাসীরা জেগে ওঠে। তারা ঠিক করে কংগ্রেস যদি এ কাজ করে তবে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের স্বপ্ন ভেঙে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। আর তারই ফলস্বরূপ এসব সমাজের মানুষ একজোট হয়ে কংগ্রেসের এ স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়, ওদের ক্ষমতা থেকে বের করে দেয়।’

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা কয়েকদিন আগে গুজরাটের ধরমপুরে এক নির্বাচনি প্রচারসভায় বলেন, ‘বিজেপির কার্যকর্তারাই বলছেন-তৃতীয়বারের জন্য তারা ক্ষমতায় এলে সংবিধান পরিবর্তন করবেন। কিন্তু মোদিজি তা অস্বীকার করছেন। প্রথমে তারা যেটা করতে চান, সেটা তারা স্বীকার করেন না। কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেটাকেই কার্যকর করেন।’ এমনকি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (কমিউনিকেশন) জয়রাম রমেশও এ অভিযোগ তুলে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘লোকসভা ভোটে মোদির ৪০০ আসন পার করার লক্ষ্যমাত্রার অর্থ হলো-তিনি চাইছেন দেশের সংবিধান বদল করতে।’

শুধু কংগ্রেসই নয়, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক দল সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও সংরক্ষণ প্রশ্নে মুখ খুলেছেন। তাঁর অভিমত-‘ভারতের বড় বড় সংস্থা যদি বিক্রি হয়ে যায় কিংবা বেসরকারিকরণ হয়ে যায় তবে সংরক্ষণ কীভাবে মিলবে? যেখানে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়-বিমানবন্দর, প্লেন, রেল, হাসপাতাল সব বিক্রি করে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। তবে কি সেখানে সংরক্ষণ থাকবে? বিজেপি শুধু চাকরির বাজার শেষ করে দেবে না, এরা সংরক্ষণকেও শেষ করতে চায়।’

সর্বশেষ খবর