শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সবুজ নগরী রাজশাহী এখন ধূসর

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

সবুজ নগরী রাজশাহী এখন ধূসর

একটা সময় সবুজ নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল রাজশাহী। সেই সবুজ নগরী এখন ধূসর। যোগাযোগ উন্নয়নের নামে পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) এরই মধ্যে কেটেছে ২ হাজার ৬১৬টি গাছ। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী এসব গাছ কাটায় শহরের তাপমাত্রা বেড়েছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। বিশ্বের অন্যতম পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে একাধিক পুরস্কার পেয়েছে রাজশাহী। সড়ক উন্নয়ন করতে গিয়ে সেই সবুজ নগরী পরিণত হচ্ছে কংক্রিটের জঞ্জালে। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কের দুই পাশে ছিল বড় বড় সব গাছ। সড়ক ছিল সবুজ টানেলের মতো। ছায়া সড়কে ছিল অন্যরকম শীতল অনুভূতি। প্রায় শেষের পথে থাকা প্রকল্পের বর্তমান চিত্র ভিন্ন। রাস্তার দুই পাশ রীতিমতো খাঁখাঁ করছে। বড় কোনো গাছের অস্তিত্ব চোখে পড়ে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কিছু গাছ লাগিয়েছেন বললেও আদতে সেগুলো সৌন্দর্যবর্ধনের গাছ। ছায়া-শীতল করার জন্য খুব বেশি ভূমিকা রাখবে না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার কোটি টাকার তিন বছর মেয়াদি বড় প্রকল্প পায় রাসিক। এরপর সেটি বাস্তবায়নে পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই কাটা হয়েছে ২ হাজার ৬১৬টি গাছ। এর মধ্যে নগরীর বন্ধ গেট থেকে সিটি হাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে কাটা হয়েছে ৮৮৭টি গাছ, তালাইমারী থেকে কাটাখালী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে ৬২১টি, ভদ্রা থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল সড়ক উন্নয়নে ৪৯৮টি, পোস্টাল একাডেমি থেকে ম্যাচ ফ্যাক্টরি উন্নয়নে ১৬৩টি ও রাজশাহী-নওহাটা আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়নে কাটা পড়েছে ৪৪৫টি গাছ। পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে সিটি করপোরেশন বলছে, বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হয়েছে। তবে বন বিভাগ বলছে, তারা শুধু গাছের মূল্য নির্ধারণ করে, গাছ কাটার কোনো অনুমতি দেয় না। রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ প্রকল্পটি আগামী জুলাই মাসেই শেষ হবে। কাজও শেষ পর্যায়ে। কিছু ফ্লাইওভার বাদে সব কাজই শেষ করেছি। এ প্রকল্প এখন রিভাইস ও দুই বছরের জন্য বাড়ানোর আবেদন পাঠানো হয়েছে।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলার) সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, ‘উন্নয়ন প্রয়োজন আছে, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন টেকসই হয় না। সিটি করপোরেশন যদি গাছগুলো রেখে প্রকল্পের কাজ করত তাহলে ভালো হতো। যদি সেটি না হয়, তবে যে এলাকায় কাজ হবে সেখানে তিন বছর বা তার আগে কিছু গাছ লাগিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে যেটা হয় আর কী, বাস্তবায়নের সময় পরিবেশের ধার ধরা হয় না।’

সর্বশেষ খবর