শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

মিরপুরে অবৈধ পাখির রমরমা ব্যবসা

সাইফ ইমন

পাখি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে না অনেকেই। খোদ রাজধানীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সবুজ টিয়া, ময়না, কালিম, ডাহুক, ঘুঘু, মুনিয়া, চড়ুইসহ বিভিন্ন জাতের পাখি। রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরে কবুতরের হাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব দেশি পাখি। প্রতি শুক্রবার এখানে জমে ওঠে কবুতরের হাট। এখানেই কিছু বিক্রেতা দেশি পাখি আনেন। বেচাকেনাও চলে নিয়মিত।

সরেজমিনে গতকাল মিরপুরের ১ নম্বরে  শাহ আলী মাজারের পাশের গলিতে সব বয়সী ক্রেতার                ভিড় দেখা যায়। এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্রেতাই এসেছেন কবুতর কিনতে। তবে কিছু দূর এগোলেই চোখে পড়বে দেশি পাখির অবৈধ কেনাবেচা। ক্রেতারাও আসছেন এসব পাখি কিনতে। ক্রেতা সেজে এগিয়ে গেলাম একজনের কাছে। নাম মনির। তার কাছে পাওয়া গেল দেশি প্রজাতির নানা রকম পাখি। সবুজ টিয়াসহ কয়েক প্রকারের শালিক রয়েছে তার কাছে। যেমন ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, ময়না শালিক, গোবরে শালিক ইত্যাদি। তার পাশেই আরেক বিক্রেতাকে দেখা গেল ময়না বিক্রি করতে। জানা গেল সবুজ টিয়ার জোড়া বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকাতে। ‘কথাবলা’ ময়নার দাম ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ‘কথাবলা’ ছাড়া সাধারণ ময়না হলে দাম ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। ভাত শালিক প্রতিটি ১ হাজার ২০০ টাকা, ঝুঁটি শালিক ১ হাজার টাকা, গোবরে শালিক ১ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে কালিম, ডাহুক, ঘুঘু, মুনিয়া ও চড়ুই পাখি। এর মধ্যে কালিম জোড়া বিক্রি হয় ১৫ হাজার টাকা। ডাহুক এক জোড়া ১ হাজার টাকা, ঘুঘু জোড়া ৮০০ টাকাতে বিক্রি হয়। হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে জমে ওঠে কবুতরের হাট। ১০টার মধ্যে শেষ। এখানে দেশি পাখি বিক্রি করেন শাহিন, সাইফুল এবং মনির। সাইফুলকে খুঁজে পাওয়া গেল সহজেই। বিদেশি পাখি দেখতে চাইলে তিনি বললেন, বিকালে আলাদাভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। জানালেন, ১ হাজার ৫০০ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের পাখিও রয়েছে তার কাছে। দেশি-বিদেশি সব পাখিই রয়েছে তার কাছে। তবে তিনি এখানে আনেন না। বাসায় রেখে পালছেন। অর্ডার পেলেই নিয়ে আসবেন। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এসব পাখি, পাখির ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস দেহের অংশ সংগ্রহ করলে, দখলে রাখলে, ক্রয়-বিক্রয় করলে বা পরিবহন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।’ হাটে আসা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, অনেকে শখ করে পাখি পালেন। তাদের হয়ে প্রায়ই এখানে পাখি কিনতে আসতে হয়। তবে মাঝেমধ্যেই বন বিভাগের লোকরা এখানে আসেন। তখন পাখি বিক্রেতারা পালিয়ে যায়। তবে তারা চলে গেলে আবার চলে পাখির বেচাকেনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পাখি বিক্রির বিষয়টি স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবহিত। তাদের ম্যানেজ করেই চলছে সব কিছু। তাই এসব অবৈধ পাখি বিক্রি বন্ধে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।

সর্বশেষ খবর