রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ভিখারির রাজপ্রাসাদ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

ভিখারির রাজপ্রাসাদ

মানসিক ভারসাম্যহীন রহিম বক্স ওরফে নমে পাগলের পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও স্বপ্ন ছিল দালান ঘরে থাকার। মনের কোনের সুপ্ত স্বপ্ন পূরণ করতে ভিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি কুড়িয়ে আনতেন পথের ধারে পড়ে থাকা ইটের টুকরো। ভিক্ষার টাকায় কিনে আনতেন সিমেন্ট-বালি। তারপর নিজ হাতে শুরু করেন অদ্ভুত আকৃতির দালানের কাজ। প্রায় ২০ বছরের চেষ্টায় চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের পাশে গড়ে তুলেছেন দুই তলা পাকা দালান। এভাবেই গড়ে ওঠে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি গ্রামের ভিখারি নমে পাগলের প্রাসাদ। স্থানীয়রা জানান, শুরুতে এক তলা বাড়ি করার লক্ষ্যে নমে পাগল ডুগডুগি গ্রামে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে শুরু করেন বাড়ির কাজ। এক সময় এক তলা সম্পন্ন হলে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন দোতলা বাড়ির। এভাবে প্রায় ২০ বছরের চেষ্টায় অদ্ভুত আকৃতির বাড়িটি নিজ হাতেই গড়ে তোলেন রহিম বক্স।

সরেজমিন ডুগডুগি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ডুগডুগি গরুর হাটের অদূরে রাস্তার পাশেই রয়েছে নমে পাগলের অদ্ভুত আকৃতির দোতলা বাড়ি। দোতলা বাড়িতে আছে ছোট ছোট চারটি কামরা। নিচতলার কামরা দুটিতে শার্টারের দরজা লাগানো। ভিতরে দেয়ালে ভিন্ন ভিন্ন রঙের টাইলস। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে লুঙ্গি-গামছা। দোতলায় একটি কক্ষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাতে রয়েছে কয়েকটি মুরগি। এই মুরগি পালনের টাকা দিয়ে ঘরের রং কিনবেন নমে পাগল।

এলাকাবাসী বলেন, ঘরে কোনো জানালা না থাকায় প্রচ  দাবদাহে কষ্টে থাকেন নমে পাগল। কেউ যদি একটা ব্যাটারিচালিত পাখার ব্যবস্থা করত, তাহলে সে কিছুটা স্বস্তি পেত। স্থানীয় বাসিন্দা শাহজান আলী বলেন, গ্রামেই নিজের দিনমজুর ছেলে থাকলেও তার কাছে থাকতে নারাজ তিনি। নিজের বাড়িতে থাকবেন, নিজের আয়ে খাবেন, এই সংকল্প তার। এজন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরে যা পান তা দিয়েই চলে তার জীবন। পাশের জয়রামপুর গ্রামের যুবক মোহাম্মদ সজল বলেন, তিনি নিয়মিত পথে যাতায়াত করেন। মাঝে মাঝেই তিনি নমে পাগলের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান। নমে পাগলের স্বপ্ন পূরণের সাক্ষী দেখে নিজেও অনুপ্রাণিত হন।

সর্বশেষ খবর