সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
আবহাওয়ার নানা রূপ

গরমের পর ঝড় বৃষ্টি বজ্র

আট মৃত্যু, কালবৈশাখি সতর্কতা, রাজধানীতে শিলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গরমের পর ঝড় বৃষ্টি বজ্র

আগামী ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে কালবৈশাখি ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। একই সঙ্গে আজ থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে তাপপ্রবাহ কমার বিষয়ও জানানো হয়েছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, গতকাল বিকাল ৪টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব বিভাগের ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ কালবৈশাখি ঝড়ের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। এ সময় বজ্রপাত ও বিচ্ছিন্নভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। কালবৈশাখি ও বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা। তারা জানান, আজ থেকে সারা দেশে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। এতে করে যেসব জায়গায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল সেগুলো ধীরে ধীরে প্রশমিত হবে। ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে নারীসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন আরও নয়জন। গতকাল ভোরে খাগড়াছড়িতে ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দীঘিনালায় বজ্রপাতে টিনের ঘরে আগুন লেগে মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। রামগড়ে বজ্রপাতে বাড়ির উঠানে থাকা দুটি গরুসহ গনেজ মারমা (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মাটিরাঙায় বজ্রপাতে সুমিকা ত্রিপুরা (২৭) নামে এক গৃহিণী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন তার দুই সন্তান। এ ছাড়া তার ঘরে থাকা তিনটি ছাগল মারা গেছে।

বাংলাদেশ ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুহার ক্রমেই বাড়ছে। ২০১০ সালে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২৩ৎ। গত বছর বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩৫০ জন। জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যান। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মারা যান বছরে গড়ে ২০ জনেরও কম। গাছপালা কেটে ফেলা বিশেষ করে খোলা মাঠের উঁচু গাছ ধ্বংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারানোদের ৭০ ভাগই কৃষক, যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে বজ্রপাতে জেলার দীঘিনালায় মা-ছেলে, রামগড়ে একজন, মাটিরাঙায় একজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দুটি গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার গোরস্থানপাড়ায় বজ্রপাতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়। রবিবার ভোরে  ঘুমন্ত অবস্থায় টিনের ঘরে বজ্রপাতের আঘাতে আগুন লেগে যায়। এতে মা ও ছেলে পুড়ে মারা যান। নিহতরা হলেন- হাসিনা বেগম (৩০) ও তার ছেলে হানিফ মিয়া (৮)। দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিভিয়ে লাশ উদ্বার করে।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি জানান, বজ্রপাতে টিনের ঘরে আগুন লেগে যায়। ঘরে থাকা মা ও ছেলে পুড়ে মারা যান। ঘটনার সময় হাসিনা বেগমের গাড়িচালক স্বামী ছাদেক আলী বাড়িতে ছিলেন না।

অপরদিকে রামগড় উপজেলার ১ নম্বর ইউনিয়নের দুর্গম হাজাছড়া এলাকায় বজ্রপাতে গনজ মারমা (৫০) নামে এক ব্যক্তিসহ তার দুটি গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত গনজ ওই এলকার বাসিন্দা কংজ্র মারমার ছেলে। হাজাছড়াপাড়া কার্বারি চাইলাপ্রু মারমা জানান, বজ্রপাতের সময় বাড়ির উঠানে বাঁধা গরু গোয়ালঘরে আনতে গিয়ে গরুসহ তার মৃত্যু হয়েছে। একইভাবে বজ্রপাতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার বেলছড়িতে সুমিতা ত্রিপুরা (৩৬) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিয়ামতপুর ইউনিয়নের হাজিপাড়া ঘোনার বাড়ি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। নিহত দুজন হলেন কৃষক আবদুল কাইয়ুমের ৯ মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী রূপ তারা (৪৫) ও তার শিশুপুত্র তাইজুল (৫)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে ঝড়বৃষ্টির সময় শিশুপুত্রকে নিয়ে ঘরে শুয়ে ছিলেন রূপ তারা। এ সময় একটি গাছ ঝড়ে উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে। এতে ঘরের নিচে চাপা পড়েন রূপ তারা ও তার শিশুপুত্র তাইজুল। ঘটনাস্থলেই মারা যায় তাইজুল। স্থানীয়রা আহত রূপ তারাকে উদ্ধার করে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় বজ্রপাতে এক হোটেলশ্রমিকের প্রাণ গেছে। উপজেলার ফতেরপাড়া-খিলপাড়া রোড এলাকায় শনিবার রাত ১১টায় এ ঘটনা ঘটে বলে ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানিয়েছেন। নিহত ৫০ বছর বয়সী ওয়াজেদ আলী খান ওই উপজেলার ঘাটাইল ইউনিয়নের খিলপাড়া এলাকার সোনা খাঁর ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করতেন।

রাজধানীতে মৌসুমের প্রথম শিলাবৃষ্টি : রাজধানী ঢাকাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ঠান্ডা বাতাসে শীতল করে অবশেষে নেমেছে বৃষ্টি। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বাতাস বইতে থাকে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নামে স্বস্তির বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে ঝরেছে শিলা। মৌসুমের প্রথম শিলাবৃষ্টির অভিজ্ঞতা নিয়েছে নগরবাসী। এই শিলা বৃষ্টির প্রভাবে তাপমাত্রাও কমেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয়রা শিলা বৃষ্টির এই তথ্য জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর