শিরোনাম
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফের চার দিনের রিমান্ডে মিল্টন

স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের চার দিনের রিমান্ডে মিল্টন

পথে-ঘাটে পড়ে থাকা গরিব ও অসহায় মানুষকে তুলে আশ্রয় দেওয়া হতো ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে। তাদের কারও কারও হাত-পায়ে পচনও ধরে যেত। যখন তাদের অপারেশনের প্রয়োজন হতো, মিল্টন সমাদ্দার নিজেই ডাক্তার বনে যেতেন। অসুস্থ-অসহায় শিশু, বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধীদের আশ্রমের তথাকথিত অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হতো। মিল্টন সমাদ্দার নিজেই ব্লেড, ছুরি দিয়ে তাদের হাত, আঙুল কেটে ফেলতেন। রক্ত ঝরিয়ে, অপারেশনের নামে হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মাদকাসক্ত মিল্টন। প্রথম তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দারের কাছ থেকে এমন রোমহর্ষক তথ্য জানতে পারেন গোয়েন্দারা। গতকাল দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়ে বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো আরও যারা কথিত মানবতার ফেরিওয়ালা আছেন, তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এদিকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করে মানব পাচার মামলায় ফের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আদালতে মিল্টন সমাদ্দার বলেন, আমার আশ্রমে ৪৫টি শিশু রয়েছে। ডিবিকে বলুন নিয়ে যেতে। মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথিক মানুষ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি স্বীকার করেছেন যে, হাত-পা কেটে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড, ছুরি জব্দ করেছি। তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের অ্যাকাউন্টে এখনো ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এতগুলো টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। তিনি নিজেই হয়ে গেছেন অপারেশন থিয়েটারের হেড। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজ করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। দুপুরে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি গোয়েন্দাদের বলেন, আমার স্বামীর এসব অপরাধের বিষয়ে জানতাম না। যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে তার বিচার হওয়া উচিত। এ বিষয়ে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি দায় এড়াতে পারেন না।

চারদিনের রিমান্ডে :গতকাল মৃত্যুসনদ জালিয়াতির অভিযোগে মিরপুর মডেল থানার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাকে মানব পাচার আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন জানানো হয়। আদালত এ সময় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তারের আদালতে মিরপুর মডেল থানায় করা মানব পাচার আইনের মামলায় রিমান্ড শুনানিতে মিল্টন সমাদ্দার বলেন, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমে আরও ৪৫টি বাচ্চা আছে। সেই বাচ্চাগুলো ডিবিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন তিনি।

গত ২৫ এপ্রিল গণমাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ উঠে আসে। এতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। এই অর্থের অপব্যবহার করেন তিনি। মানবিক কাজের জন্য এ পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়।

 পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে তার রোমহর্ষক নানা অজানা কাহিনি।

সর্বশেষ খবর