মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রধান বিচারপতি

মূল্যবোধ ছাড়া বিচারাঙ্গন কাঠ পাথরের স্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, পেশাগত নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যথাযথ অনুশীলনই আইন পেশার মূল ভিত্তি। যদি পেশাগত মূল্যবোধের অনুশীলন ব্যতিরেকে আইন চর্চা করা হয়, তবে আমাদের বিচারাঙ্গন পরিণত হবে নিছক কাঠ-পাথরের কিছু স্থাপনায়। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত আইন পেশার আদর্শ ও নৈতিকতা এবং বিচারিক পর্যালোচনা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল সেশনে বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার। বিশেষ অতিথি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, যদি বিচারাঙ্গনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আইনজীবীরা আইন পেশা পরিচালনায় পেশাগত নৈতিক মানদণ্ড রক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব প্রদান না করেন, তাহলে মানুষের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের বিচারালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যে উদ্দেশের কথা প্রোথিত রয়েছে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান সংবিধানে, সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের সমাজের সবচেয়ে অসহায় মানুষেরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতে আসেন, আইনজীবীদের দ্বারস্থ হন। এই অসহায় মানুষগুলোকে আইনি সেবা প্রদানের যে নৈতিক দায়িত্ব আইনজীবীর রয়েছে, সেই দায়িত্ব পালনে আমাদের সবাইকে মানবিক হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইনজীবী হিসেবে আপনার সাফল্য কেবল মামলার জয়-পরাজয়ের নিক্তিতে মাপলেই চলবে না। বরং আদালতে আইনের ব্যাখ্যা প্রদানে আপনি কতটা মানবিকতা ও উদারতার পরিচয় দিচ্ছেন কিংবা মামলায় জয়লাভের তুলনায় আপনি ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব প্রদান করছেন কি না- এই বিষয়গুলোই কিন্তু আপনাকে একজন সত্যিকারের আইনজীবী হিসেবে অন্যদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবে। আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন আইনজীবীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব মক্কেলের গোপনীয়তা রক্ষা করা। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এ বিষয়টা যতটা গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়, আমরা ততটা গুরুত্ব প্রদান করি না। কিন্তু আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আইনজীবীরা নির্দিষ্ট একটি পরিসরে তাদের পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনা করেন বিধায় এখানে প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা যেন হয় সুস্থ আইনি প্রতিযোগিতা। ক্লায়েন্ট বা মামলা নিয়ে হোক, কিংবা ব্যক্তিগত বা প্রফেশনাল জেলাসির কারণে হোক, আইনাঙ্গনে নিজেদের মধ্যে কদর্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন না।

 

সর্বশেষ খবর