শিরোনাম
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

প্রতিদিন ডেস্ক

ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ফেনীতে ঘরের ওপর ভেঙে পড়েছে গাছ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কালবৈশাখি ঝড়ে ফেনী জেলার শতাধিক স্থানে বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটিতে গাছ পড়ে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিভিন্ন গ্রামে মানুষের কাঁচা বাড়িতে গাছ পড়েও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ফেনীর প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ গ্রাহক পায়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। শরীয়তপুরে শিলাবৃষ্টিতে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হবিগঞ্জে মাত্র ২৫ মিনিটের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ৭৯ হেক্টর ফসল ও সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফেনী : কালবৈশাখি ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ফেনী। ওয়াপদা ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলে ফেনীতে বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার। এখন পর্যন্ত ফেনীর প্রায় তিনভাগের দুই ভাগ গ্রাহক পায়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝড়ে সোমবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশে অন্তত ১০ স্থানে গাছ ও ঢাল পড়ে সড়ক যোগাযোগ কয়েক ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন ছিল। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মহাসড়ক থেকে গাছ অপসারণ করার পরও মহাসড়কে সোমবার পুরো রাত দীর্ঘ যানজট ছিল। ঝড়ে ফেনী শহরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ফেনীতে ঝড় হয়। পরে রাত পর্যন্ত জেলাব্যাপী থেমে থেমে ঝড় হয়।

ফেনীর ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ইনচার্জ রাশেদ খান চৌধুরী জানান, মহাসড়কের তার অংশে প্রায় ৫/৬ স্থানে গাছ ও ঢাল পড়ে সড়ক বন্ধ হলে দ্রুত অপসারণ করে যান চলাচলে স্বাভাবিক করা হয়।

ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মজিদ জানান, ঝড়ে ফেনীর প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে গাছ ও ঢাল পড়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ফজলুর রহমান জানান, পল্লী বিদ্যুতের ৪ লাখ গ্রাহক রয়েছে। প্রায় সব গ্রাহকই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। গতকাল রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিন ভাগের এক ভাগ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পুরোদমে কাজ চলছে।

ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম ফরহাদ জানান, ফেনী শহরে ৮৭ হাজার গ্রাহক রয়েছে। সব গ্রাহকই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। আমরা দ্রুতগতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় স্থাপন করছি।

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, ঝড়ে আমাদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফেনীতে আগেই বোরো ধান কেটে ফেলা হয়েছে। যেগুলো মাঠে রয়েছে সেগুলোর তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে প্রচুর সংখ্যক গাছ ভেঙে পড়েছে।

ঝড়ে ফেনীর উপকূলীয় সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩৩৭টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে পল্লী বিদ্যুতের ২৪টির মতো খুঁটি। হেলে পড়েছে ২৮টি খুঁটি। গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর পড়ায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত প্রায় ৫৬ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার দুপুরে কালবৈশাখি বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে অনেক দূরে আছড়ে পড়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ও হাঁস-মুরগির খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শরীয়তপুর : তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শ্রমিক সংকটে মাঠের পাকা ধান সময় মতো ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক। এ অবস্থায় জেলাজুড়ে শিলাবৃষ্টিতে মাঠে থাকা পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলা শহরসহ অন্যান্য উপজেলায় ঝড়সহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে।

জেলার কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪৫ ভাগ ধান ঘরে তুলতে পেরেছে কৃষকরা। বাকি ৫৫ ভাগের মধ্যে ২০ ভাগ ধান এখনো কাঁচা। সোমবার দুপুর থেকে ঝড়সহ শীলাবৃষ্টি শুরু হয় জেলায়।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে মাত্র ২৫ মিনিটের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ৭৯ হেক্টর ফসল ও সবজি খেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। গতকাল সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি জানান, গত রবিবার হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ও বাহুবল উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রচ ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এতে ৬২ হেক্টর বোরো ধানের জমি ও ১৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এ ছাড়াও হবিগঞ্জ শহর ও লাখাই উপজেলায় বেশ কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রচন্ডবেগে শিলা হওয়ার কারণে হবিগঞ্জ শহরে অন্তত ১৫টি যানবাহনের গ্লাস ভেঙে গেছে। এতে চালক ও পথচারীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

টমটম চালক আবদুল আজিজ জানান, আমি থানার মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে তিনকোনা পুকুরপাড় পৌঁছামাত্র ব্যাপক শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ি। শিলার তীব্রতা এতটাই ছিল যে, আমিসহ যাত্রীরা টমটম থেকে নামার সুযোগটুকুও পাইনি। একপর্যায়ে বড় বড় কয়েকটি শিলা টমটমের সামনের গ্লাসে আঘাত করলে গ্লাসটি ভেঙে যায়। আর গ্লাসের টুকরো আমার পায়ে গিয়ে আঘাত করলে আমি আহত হই।

রিকশাচালক ছালেক মিয়া জানান, শিলার তীব্রতা খুবই বেশি ছিল। তিনি বলেন, শিলার সময় রিকশা রাস্তার এক পাশে রেখে আমি কোনোমতে একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নিই।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর