বুধবার, ৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মরণকামড় থ্যালাসেমিয়ার

♦ প্রতি বছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ প্রায় ১৫ হাজার শিশুর ♦ আজ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দেশে প্রতি বছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে ১২ থেকে ১৫ হাজার শিশু। মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকের সঙ্গে বাহকের বিয়ে হলে জন্ম নেওয়া সন্তান এ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাই বিয়ের আগে পাত্রপাত্রী থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না পরীক্ষা না করায় মরণকামড় বসাচ্ছে এ রোগ।

সচেতনতার অভাবে প্রতি বছর বাড়ছে থ্যালাসেমিয়া রোগী। এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জীবনের ক্ষমতায়নে অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসায় সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা’। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশের হাসপাতাল, বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সহায়তায় রোটারি ক্লাব অব ঢাকা কারওয়ান বাজার এবং অন্যান্য ক্লাব রক্তদান কর্মসূচি পরিচালনা করে। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটি হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা. একরামুল হোসেন বলেন, দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি হলে থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। মানুষ সচেতন হলে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন আর ওষুধই একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু এটা খুব ব্যয়বহুল। সরকারি-বেসরকারি অনুদান এবং মানবিক মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তায় এ চিকিৎসা চলে। প্রতি মাসে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় ৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের রক্তরোগ, যা বংশগতভাবে প্রবাহিত হয়। থ্যালাসেমিয়া রোগীকে সারা জীবন অন্যের রক্ত নিতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে নানা রকম সচেতনতামূলক কাজ চলছে। কিন্তু এখনো তরুণদের মাঝে আশানুরূপ সাড়া পড়েনি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণরা জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার সময় যেন সহজে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করতে পারে এজন্য আমরা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করছি। এখানে তরুণদের জন্য আমরা কিছু টেস্টের কথা বলে দেব। ডায়াগনস্টিক থেকে টেস্ট করে রিপোর্ট এখানে আপলোড করে দিলেই থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় করে ফিরতি মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হবে।’ জন্মের চার মাস পর থেকে প্রতি মাসে দুবার রক্ত নিতে হয় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু মোহাম্মদ সজীবকে (১২)। ‘এ পজিটিভ’ ব্লাড গ্রুপের সজীবের রক্ত জোগাড় করতে প্রায় হিমশিম খেতে হয় তার পরিবারকে। রক্ত না পেলে বা টাকার অভাবে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে না পারলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যায় সজীব, তখন কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করতে হয় তার। সজীবের বাবা সবুজ মিয়া রাজধানীর ইস্কাটনে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে প্রতি মাসে সজীবকে দুবার ব্লাড দেওয়ার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে যায়। তাই কাজের পর অধিকাংশ সময় সন্তানের চিকিৎসার জন্য পথচারীদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, দেশে প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দেশে এর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগও অনেক কম।

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়মিত রক্ত এবং ওষুধের প্রয়োজন হয়। বারবার রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরে আয়রন জমে যায়। এ আয়রন বের করার খরচ আরও বেশি। রক্তের জন্য মানসম্মত ব্লাড ব্যাংক রয়েছে দেশে দুই থেকে তিনটি। তাই বিশুদ্ধ রক্ত পাওয়াও বড় চ্যালেঞ্জ। এত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে না পেরে অধিকাংশ রোগী অসম্পূর্ণ চিকিৎসা নেয় অথবা চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর