বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

শরিয়া না মানলে লাইসেন্স বাতিল

ইসলামী বিমার জন্য হচ্ছে পৃথক বিধিমালা, গঠন করতে হবে পাঁচ সদস্যের শরিয়া কাউন্সিল

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ইসলামী বিমার জন্য একটি বিধিমালা করতে যাচ্ছে সরকার, যার খসড়ায় বলা হয়েছে-শরিয়া প্রতিপালন ছাড়া ব্যবসা করলে কারণ দর্শানোর মাধ্যমে অভিযুক্ত বিমা কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।

ইসলামী বিমা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে শরিয়া কাউন্সিলের পরামর্শক্রমে শরিয়া পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। শরিয়া প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিমা কোম্পানিকে পাঁচ সদস্যের শরিয়া কাউন্সিল গঠন করতে হবে।

২৮ এপ্রিল বিধিমালার খসড়া অংশীজনদের মতামত নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে ওই খসড়ার ওপর মতামত চাওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব ড. নাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২০১০ সালে বিমা কোম্পানি আইন হয়েছে। সে আইনের আওতায় দেশের ইসলামী বিমা কোম্পানি পরিচালনার জন্য বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বিধিমালাটি তারা করলেও এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই চূড়ান্ত করতে হবে। সে কারণেই প্রণীত খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে।

সূত্র জানান, ২০১০ সালের বিমা আইনটিতে মূলত প্রচলিত বিমা খাতকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই আইনে ইসলামী বিমা নিয়ে তিনটি ধারা থাকলেও বর্তমানে দেশে বিমা কোম্পানিগুলো ‘ইসলামী’ নাম যোগ করে ব্যবসায় গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। ফলে ইসলামী বিমাগুলোর জন্য পৃথক বিধিমালা জরুরি হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ৮০টি বিমা কোম্পানি বিমা সেবা দিচ্ছে, যার মধ্যে ৩৪টি লাইফ বিমাকারী কোম্পানি এবং ৪৬টি নন-লাইফ বিমাকারী কোম্পানি। লাইফ বিমাকারী কোম্পানির মধ্যে একটি সরকারি এবং ৩৩টি বেসরকারি মালিকানাধীন। তার মধ্যে ইসলামী বিমার সংখ্যা ২৬। তিনটি নন-লাইফ পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিমা কোম্পানি, আটটি লাইফ পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিমা কোম্পানি ও ১৫টি লাইফ ইসলামী বিমা উইং ইসলামী বিমা ব্যবসা পরিচালনা করছে। আইডিআরএ-সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে বিমা খাতের অনেক কোম্পানি নামের সঙ্গে ‘ইসলামী’ শব্দ জুড়ে দিয়ে বিমা ব্যবসা পরিচালনা করলেও প্রকৃত অর্থে এরা কেউ শরিয়া বিধি মানছে না। দেশের বেশির ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ধর্মপ্রাণ মানুষের ভাবানুভূতি কাজে লাগিয়ে এ ইসলামী নামধারী বিমা কোম্পানিগুলো মূলত প্রতারণা করছে। কর্মকর্তারা জানান, ইসলামী বিমা (তাকাফুল) ও প্রচলিত বিমার মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী শরিয়তের অনুশাসনের ভিত্তিতে তাকাফুল বা ইসলামী বিমা পরিচালিত হলেও প্রচলিত বাণিজ্যিক বিমাব্যবস্থায় শরিয়া পালনের প্রতিশ্রুতি নেই। এ ছাড়া ইসলামী বিমায় শরিয়া সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কি না নিশ্চিত করতে শরিয়া কাউন্সিল গঠনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রচলিত বিমায় এ ধরনের কোনো কাউন্সিল থাকে না। বাংলাদেশে বিমা কোম্পানিগুলো ‘ইসলামী’ নাম ব্যবহার করলেও প্রকৃত অর্থে কোনোটাই শরিয়া রীতি মানছে না। এ কারণেই বিধিমালার খসড়ায় শরিয়া কাউন্সিল গঠন এবং শরিয়া মেনে বিমা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো জীবন বিমা কোম্পানি যদি একই সঙ্গে প্রচলিত জীবন বিমা ব্যবসা ও ইসলামী বিমা ব্যবসা করতে চায়, তাহলে হিসাবসহ সবকিছু আলাদা সংরক্ষণ করতে হবে। যে ইসলামী বিমা পলিসি বা পরিকল্পের জন্য বিমা কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবে, সেগুলোর বিশদ বিবরণ সংস্থাটির কাছে তুলে ধরতে হবে। এর মধ্যে পলিসির পদ্ধতি, সুবিধা ও প্রিমিয়ামের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

আইডিআরএ’র মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিমা ব্যবসায় ইসলামী নাম ব্যবহার করলে শরিয়া মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। কেউ যেন ইসলামী নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করতে না পারে, সে লক্ষ্যেই ইসলামী বিমা পরিচালনায় বিধিমালা করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর