বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
ইসরায়েলি হামলা

যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশে দেশে বিক্ষোভ চলছেই

প্রতিদিন ডেস্ক

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলির বর্বরতার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ছাত্রবিক্ষোভ ক্রমেই সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র ইউরোপের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। গতকাল অধিকাংশ বিক্ষোভেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক দমন অভিযানও চালিয়েছে। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম (ইউভিএ) ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে ১৬৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, পাশাপাশি ব্যাপক মাত্রায় লাঠি, পিপার ¯েপ্র এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় আমস্টারডাম পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানী শহর এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাধ্য হয়ে কঠোর হতে হয়েছে পুলিশকে। গ্রেফতার ১৬৯ জনের মধ্যে ৪ ছাড়া বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খবরে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের আরও দুই বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব আটরেশট এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেলফেও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যাবতীয় চুক্তি বাতিলের দাবিও সামনে আনছেন তারা। বিক্ষোভ দমনে এরই মধ্যে তৎপর হয়েছে এসব দেশের সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শহরে পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ এবং গ্রেফতারের তথ্যও আসছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিপজিগের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিপজিগের একটি লেকচার হল দখল করেন ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল। দখলের পর তারা হলের সামনে ব্যানার টানান। সেখানে লেখা ছিল, ‘গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় দখল’। ব্যানার টানানোর পাশাপাশি লেকচার হলের সামনে ব্যারিকেড স্থাপন করে সেটিকে ‘মুক্তাঞ্চল’ ঘোষণা এবং হলের আশপাশের ফাঁকা জমিতে অস্থায়ী তাঁবুও স্থাপন করেন তারা। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ফিরে না যাওয়ায় সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পুলিশ এসে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি লিপজিগ পুলিশ, তবে হল দখলের পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ১৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ফ্রান্সের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটিতে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত যাবতীয় চুক্তি বাতিলের দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন ১৩ শিক্ষার্থী।

একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পরীক্ষা হলে গিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন আরও ২০ শিক্ষার্থী। এ সময় হলে পরীক্ষা চলছিল। পরে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দিলে ফের পরীক্ষা শুরু হয়। একই দিন সন্ধ্যায় প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্ফিথিয়েটারে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবিতে চলতি সপ্তাহে আন্দোলন শুরু হয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রধান তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ইউনিভার্সিটি অব ল্যুজান, ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা এবং ইউনিভার্সিটি অব জুরিখ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইউনিভার্সিটি অব ল্যুজানের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, যে দাবি শিক্ষার্থীদের একাংশ তুলছেন, তা মেনে নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছে না বিশ্ববিদ্যালয়। অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত বৃহস্পতিবার থেকে অবস্থান নিয়ে আছেন কয়েক ডজন ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারী। বেলজিয়ামের গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়েও গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইতালি, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পাসেও ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর