শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

অযত্ন-অবহেলায় রাজধানীর ভাস্কর্য

সাইফ ইমন

অযত্ন-অবহেলায় রাজধানীর ভাস্কর্য

পথশিশুদের কাঁথাকাপড় রোদে শুকানো হচ্ছে ঐতিহাসিক রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। ভাস্কর্যের শরীরে পাখিদের বিষ্ঠা। দেখেই বোঝা যায় কতটা অযত্ন-অবহেলায় আছে ভাস্কর্যটি। শুধু রাজু ভাস্কর্য নয়, রাজধানীর অধিকাংশ ভাস্কর্যের একই চিত্র। বনানী-কাকলি মোড়ের অদম্য বিজয় কিংবা কুড়িল বিশ্বরোডের নিকুঞ্জ স্বাধীনতা-সবকটিরই বেহাল দশা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত অনেক ভাস্কর্যের বিষয়ে নাগরিকদের অভিযোগও আছে। প্রধান অভিযোগ হলো, অনেক ভাস্কর্যই সত্যিকার ভাস্কর্য হয়ে ওঠেনি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে প্রয়াত ভাস্কর শামীম শিকদারের ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যটির অবস্থা একই রকম। সন্ধ্যার পরই বহিরাগতরা প্রবেশ করে এখানে। ২০ বছর ধরে ভাস্কর্য চত্বরের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন বাদল গোয়ালা। তিনি বলেন, ‘সবাই সচেতন না হলে পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব না। ময়লা, চিপস-সিগারেটের প্যাকেট, কলার খোসাসহ নানা আবর্জনা ফেলে নোংরা করে রাখা হয়। প্রতিদিন সকালে এসে আমাকে পরিষ্কার করতে হয়। তার পরও পরিষ্কার থাকে না।’ ক্রিকেট বিশ্বকাপ কেন্দ্র করে ২০১১ সালে বনানী-কাকলি মোড়ে স্থাপন করা হয় খেলোয়াড়দের প্রতিকৃতিতে ‘অদম্য বিজয়’ নামের ভাস্কর্যটি। অথচ সেখানে গেলে চোখে পড়ে ভাস্কর্যগুলোর প্রতি অযত্ন আর অবহেলা। নেই সংস্কারের উদ্যোগ। ঝলসে গেছে রং। ধুলোবালিতে একাকার। আস্তর ভেঙে ভেঙে পড়ার উপক্রম। স্থানীয়রা বলেন, ব্যবস্থাপনায় অনেক ঝামেলা। ফলে এ অদম্য বিজয় এখন লজ্জার কারণ। বনানী ১১ নম্বর ব্রিজে চোখে পড়ে বিকৃত বাঘের অবয়ব। এমন ভাস্কর্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভও লক্ষ্য করা গেছে। তারা বলছে, শহরের বিভিন্ন ভাস্কর্যের অনুষঙ্গ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তৈরি নয়, আবার কোনোটির অভিব্যক্তি ঠিক নেই। কোনোটি আবার দেখতে বেঢপ টাইপের। শিল্পবোদ্ধারাও এ বিষয়ে একমত।

নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরায় ভাস্কর্যের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশে যত ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে বেশির ভাগই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। এ ছাড়া বাঙালি জাতির ঐতিহ্য নিয়ে নির্মিত হয়েছে নানা ভাস্কর্য।

এ পরিস্থিতিতেও কিছুটা স্বস্তি দেবে হাতিরঝিলের হাতির পাল। এফডিসি মোড় থেকে হাতিরঝিলে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে এ হাতির পালের ভাস্কর্য। এগুলো তুলনামূলক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। গায়ের রংটাও ঝলসে যায়নি। দর্শনার্থীদেরও দেখা যায় হাতির পালের ভাস্কর্যের সঙ্গে ছবি তুলতে। এখানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন হাসান আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে হাতিরঝিলে এসেছি। এখানে অনেক হাতির ভাস্কর্য দেখে বাচ্চারা বেশ কৌতূহলী। আমি তাদের জানিয়েছি একসময় হাতিরা পিলখানা থেকে এখানে আসত গোসল করতে। সেই থেকেই এ জায়গার নামকরণ হয় হাতিরঝিল।’

ঢাকার বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ঘিরে তৈরি হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’। এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছর ১০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ উদ্বোধনকালে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এ ভাস্কর্যটি নিছক একটি ভাস্কর্য নয়, এটি দেশকে জানার একটি ইতিহাস।’ এ প্রাঙ্গণে জাতির পিতার ভাস্কর্যটি রাতের বেলা বেশি আকর্ষণীয় সুন্দর আলোকসজ্জার কারণে। এখানে এলে বোঝা যায় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় এ ভাস্কর্যপ্রাঙ্গণ। কুড়িল বিশ্বরোডে ফ্লইওভারে ওঠার সময় চোখে পড়ে নিকুঞ্জ স্বাধীনতা ভাস্কর্য। এর নানা জায়গায় দেখা যায় ফাটল, গায়ের রং নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। নামফলকটি পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণহত্যার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য ‘৭১-এর গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’। এখানে এলে দেখা যায় যতেœর চিহ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটু ভিতরে ঢুকলেই দেখা যায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

সর্বশেষ খবর