শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

শাস্তির সুপারিশ দুদকের মন্ত্রণালয় দিল পদোন্নতি

একই দিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই আদেশ

ওয়াজেদ হীরা

দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়া এক ডাক্তারকে নিয়ে একই দিনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ দুই ধরনের আদেশ জারি করেছে। এক আদেশে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরেক আদেশে ওই কর্মস্থলে রেখেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডা. মেহবুবা সাঈদকে নিয়ে।

জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, ইন্টার্নি চিকিৎসক, অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক ডা. মেহবুবার ব্যাপারে অনুসন্ধান চালায়।                

নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ায় ওই ডাক্তারকে দ্রুত অন্যত্র বদলি করতে এবং বিভাগীয় শাস্তির জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয় দুদক। দুদকের চিঠির পর ২৮ মার্চ ওই কর্মকর্তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে বদলি করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে চিঠি দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। অথচ একই দিন তড়িঘড়ি করে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ ওই কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি না করে ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে, অধিদফতর এবং প্রতিষ্ঠানটিতে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অনেকেই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। নাম প্রকাশ না করে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এভাবে দুটি আদেশ ঠিক হয়নি। এতে মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যায়। মনে হতে পারে এক বিভাগের সঙ্গে আরেক বিভাগের দ্বন্দ্ব চলছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রশাসন অনুবিভাগ অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জিয়াউদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন হওয়ার কথাই নয়। দুদকের সুপারিশে আমরা শাস্তির কথা লিখেছি ডিজিকে। এরপরও এরকম হয়ে থাকলে এটি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ডিসিপ্লিন থেকেই অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দীর্ঘদিন এ নিয়ম চলে আসলেও এবার ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ডিসিপ্লিনের কাউকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। স্বাধীনতা দেশজ চিকিৎসক পরিষদ (স্বাদেচিপ) প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষার্থে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ডিসিপ্লিনের বিষয়ে সুপারিশ করে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সেটিরও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সব নিয়ম ভঙ্গ করে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ডা. মেহবুবাকে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ অধিদফতরও সমালোচনায় মুখর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ডা. মেহবুবা সাঈদের অপকর্মের অভিযোগ নিয়ে একাধিকবার বিভাগীয় তদন্ত হলেও কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। গত ১২ মার্চ ৫টি অভিযোগ উল্লেখ করে তাকে বদলিসহ ন্যায় বিচারের দাবিতে স্বাস্থ্যের ডিজিকে চিঠি দেন কলেজের শিক্ষার্থীরাও। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ মন্তব্য করতে চায়নি। তবে একাধিক শিক্ষক বলেছেন তদন্তে প্রমাণিত কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে প্রমোশন দেওয়ার ঘটনা দিনের আলোয় ডাকাতির মতো ঘটনা। আইনের শাসনে পরিপন্থি। দুদকের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য দাবি জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষকরা।

সর্বশেষ খবর