শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভবঘুরেদের বিচরণে নিরাপত্তাহীন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

মো. ছাব্বিরুল ইসলাম

দেশসেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভবঘুরেদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। ভবঘুরেদের জন্য ঢাবি ক্যাম্পাস নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হলেও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে অনেকের। ক্যাম্পাসে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ, শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ছিনতাই, মাদক সেবনের মতো কাজে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের পাশে মিজান চত্বর, টিএসসির পাশে মেট্রো স্টেশনের নিচ, বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনের ফুটপাতে নিয়মিত থাকা শুরু করেছে কিছু ভবঘুরে মানুষ। সুফিয়া কামাল হলের সামনের ফুটপাতেও সব সময় দেখা মেলে এমন মানুষের। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যত্রতত্র দেখা যায় তাদের।

সম্প্রতি একজন নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, একজন ভবঘুরে পাগল তার সঙ্গে রিকশায় উঠে তাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে দেয়। আশপাশের মানুষ পাগলের কারবার মনে করে হাসাহাসি করছিল এবং কোনোরূপ সাহায্য করেনি। আবার অনেকেই বিষয়টিকে ঠাট্টা হিসেবে উড়িয়ে দেয়। অনেকে ‘পাগল মানুষ’ বলে সহানুভূতি প্রদর্শনের কথা বলে। এমন ঘটনা প্রিয় ক্যাম্পাস ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, ‘রাতে টিউশন শেষ করে হলের সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে অনেক ভয় হয়। হলের রাস্তার ফুটপাতে নেশাগ্রস্ত ভবঘুরে মানুষ পড়ে থাকে। যে কোনো সময়ই তারা ঘটাতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা।’ ভবঘুরেদের নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘ভিসি চত্বরে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি এক পাগল এসে কেউ সামনে পড়লে ভয় দেখাচ্ছিল, চিৎকার করছিল। একপর্যায়ে সে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি আটকে গাড়ির ছাদে উঠে চিৎকার করতে থাকে। একটু পর গাড়ি টান দিলে সে পড়ে রাস্তায় শুয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনা ঢাবির মতো শিক্ষাঙ্গনে কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা ভবঘুরেদের নিয়ে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সেফাতুল্লাহ তাসনিম লেখেন, ‘কার্জন হল এলাকায় এক চোর দিনে দুপুরে আমাদের বিভাগের এক সহপাঠী বোনের ফোন ছিনতাই করতে হাত বাড়ায়, হাতে আঘাত করে। পরে চোরকে ধরে ফেললে চোর নিজের গায়ে ব্লেড দিয়ে আঘাত করে সিনক্রিয়েট করতে থাকে।’

আরেকজন লেখেন, ‘আমার ছাত্রীর সঙ্গে যা হলো, তার পর থেকে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমার চারজন ছাত্রী ভর্তি পরীক্ষা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সামাজিক বিজ্ঞান ও ভাষা ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা শেষে রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে ডাসের দিকে যাচ্ছি সিএনজিতে তুলে দিতে। এমন সময় এক ভবঘুরে পেছন থেকে এসে একজনের হাত ধরে টানতে থাকে। ভবঘুরের হাতে সিরিঞ্জ, ব্লেড ও নেশাজাতীয় দ্রব্য ছিল। আমার ছাত্রী চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। কয়েকজন জুনিয়র ও রিকশাচালক এগিয়ে আসায় সে দৌড়ে পালায়। মেয়েটি এখনো ট্রমাটাইজড। দিনের বেলায় যদি এই হয় অবস্থা তাহলে সন্ধ্যার পর মেয়েরা যারা ক্যাম্পাসে চলাচল করে তারা কতটা ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে চলে?’

চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাহরীন বাঁধন পোস্ট করেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে রোকেয়া হলের সামনে রাস্তায় বসে এক ভবঘুরে/পাগল গাঁজা সেবন করছিল। আমি তার পাশ দিয়ে হেঁটে আসার সময় দেখে বুঝতে পেরে প্রক্টর স্যারকে ফোন দিই। তিনি সব শুনলেন। এরপর বললেন, আশেপাশে থেকে নজর রাখতে। দু-তিন মিনিট পর গাড়ি চলে আসে। উত্তমমধ্যম দিয়ে বের করে দেন। যে কোনো সমস্যায় তাদের ফোন দিতে বলেন।’ গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীদের ‘নেশাখোর ভবঘুরে নির্মূলে অমর একুশে হলের জিরো টলারেন্স নীতি’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। এতে ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী আল জামী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ভাসমান মাদকাসক্ত এক ব্যক্তি খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা এক পরীক্ষার্থীকে হেনস্তা করে এবং টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে অমর একুশে হলের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীরা সেদিন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে থাকা সব মাদকাসক্ত ভবঘুরে ব্যক্তিকে উচ্ছেদ করেন। এ সময় তাদের কাছে থাকা সব মাদকদ্রব্য, ইনজেকশন সিরিঞ্জ ও তাদের যাবতীয় আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়।’ অভিযান চালানো ছাত্ররা জানান, আমরা শুক্রবার তাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করেছিলাম এবং এখানে ফিরে না আসতে সতর্ক করেছিলাম। এক দিন না যেতেই তারা আবারও এখানে অবস্থান করে এবং রাতে শহীদুল্লাহ্ হলের সামনে পিকনিক ও আনন্দ-ফূর্তি করে। ফলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা এ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘ক্যাম্পাস ভাসমান দোকান ও ভবঘুরে মুক্ত করার জন্য টহল দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক দোকানের জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে কিছু শিক্ষার্থী মানবিক আবেদনের নাম করে আমাদের কাছ থেকে সেগুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং সমাজমাধ্যমে নিন্দাসূচক লেখালেখিও করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা কঠোর হব। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সহায়তাও জরুরি।’

সর্বশেষ খবর