সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছেলেরা কেন পিছিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলেও পাসের হার ও জিপিএ-৫ অর্জনের দিক দিয়ে ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যায়ও এগিয়ে মেয়েরা। লেখাপড়ায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখা হলেও ছেলেদের পিছিয়ে পড়া উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এর কারণ খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লেখাপড়ায় ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে মোটা দাগে ৪-৫টি কারণকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদরা।

এ ব্যাপারে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে হয়নি। কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দেখছি। কেন এটা হচ্ছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা হয়নি। তাই এর প্রকৃত কারণও অজানা। প্রধানমন্ত্রীও এর কারণ খুঁজতে বলেছেন। মাঠপর্যায়ে কাজের ভিত্তিতে যে কারণগুলো সামনে এসেছে, তাতে তিন-চারটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। প্রথমত, মেয়েদের জন্য রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেশি। মেয়েরা বিনা বেতনে পড়ে, উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পায়। ছেলেরা সেটা পায় না। ছেলেরা আড্ডা দিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করে।  মেয়েরা ওই সময়ে লেখাপড়া করে। এ ছাড়া মেয়েরা অনেক ঝুঁকি পার করে এসেছে। বাল্যবিয়ে, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা- এমন অনেক বিষয়ের সঙ্গে মেয়েরা যুদ্ধ করে এগিয়েছে। এজন্য মেয়েদের ব্যাপারে পরিবারগুলোও এখন অনেক বেশি সচেতন। সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টা খুব বেশি সামনে আসছে। ছেলেরা গ্যাংবাজি করে সময় নষ্ট করছে। আবার এসব গ্যাংয়ের ভয়ে অনেক মেয়ে রাস্তায় বের হতে ভয় পাচ্ছে। ফলে তারা পড়ার সময় বেশি পাচ্ছে। এমন আরও অনেক কারণ থাকতে পারে, যা গবেষণা করলে জানা যাবে। তবে ছেলেদের পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সমান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে এসব কারণের পাশাপাশি মাদককেও দায়ী করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ছেলেদের জন্য মাদক যতটা সহজলভ্য, মেয়েদের জন্য ততটা নয়। অনেক ছেলে স্কুলজীবনে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে তার লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ছাত্র কম বয়সে পরিবারের দায়িত্ব নিতে খন্ডকালীন কাজ করছে। শহরের কম বয়সী ছেলেদের মধ্যে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। বাইরে আড্ডা, খেলাধুলাও ছেলেরা বেশি করে। অনলাইন গেম ও অনলাইন জুয়ায় আসক্তিও ছেলেদের লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণা করলে মূল কারণ উঠে আসবে।

কারণ খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : গতকাল গণভবনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষায় মেয়েদের অধিক অংশগ্রহণ ও ভালো ফলাফল সুখবর। তবে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের তিনি বলেন, যার যার বোর্ডে আপনারা খবর নেন, কী কারণে ছেলেরা পিছিয়ে। ইদানীং কিশোর গ্যাং দেখছি। এগুলো আমরা দেখতে চাই না। সেখান থেকে তাদের বিরত করা, একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিবিএসকেও বলব বিষয়টা দেখতে।

এদিকে ছাত্রীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে ছাত্রদের জন্যও উপবৃত্তিকে একটি উপায় হিসেবে কাজে লাগানোর কথা ভাবছে সরকার। গতকাল শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ছাত্রীদের জন্য আমরা অনেক বিশেষ ব্যবস্থা, দীর্ঘদিন ধরে উপবৃত্তিসহ নানা সুবিধা দিয়ে আসছি। সেগুলো পরিবর্তন করে ছাত্ররাও যাতে সমানভাবে ছাত্রীদের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিতে প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ছাত্রীদের চেয়ে পিছিয়ে থাকছে ছেলেরা। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। এ বছর ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ শতাংশ, ছাত্রদের ৮১.৫৭ শতাংশ। ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন, ছাত্রদের মধ্যে পেয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। ছাত্রদের চেয়ে ১৫ হাজার ৪২৩ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পরীক্ষাতেও ছাত্রদের চেয়ে ৩৬ হাজার ৯ জন ছাত্রী বেশি অংশগ্রহণ করেছে। আগের বছরও ছেলেদের চেয়ে ১৩ হাজার ৬৫০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তখন মেয়েদের পাসের হার ছিল ৮১.৮৮ শতাংশ, ছেলেদের ছিল ৭৮.৮৭ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর