সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

জজের বাড়ি বকের সারি

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

জজের বাড়ি বকের সারি

শেরপুরের সীমান্ত উপজেলা ঝিনাইগাতীর নিভৃত পল্লী হাতিবান্ধা ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া। এই পাড়ার নির্জন এলাকায় গাছসমৃদ্ধ ছায়াঘেরা স্থানে খুলনা আদালতের জজ (বিচারক) রোজিনা আক্তারের বাড়ি। আর এই বাড়িটির গাছে গাছে আবাসন গড়েছে কালো রাঙা ঠোঁট ও পা-পাখা এবং পেছনের অংশ সাদাকালো রংবিশিষ্ট বকের সারি। এ যেন বকের কলোনি। ধবধবে সাদাকালো রঙের বক ছাড়াও ধূসর বক, বড়ো সাদা বক, মাঝারি সাদা বক, ছোট সাদা বক, ছোট বক ও ময়ুরপঙ্খী বকের বিশাল মিলনমেলা এখানে। সকাল-বিকাল এখানে বকেরা সারি বেঁধে বসে থাকা, আসা-যাওয়া, আনাগোনায় কবিরাজপাড়ার এই জজবাড়ি মুখরিত থাকে। বছরের পর বছর ওরা এখানে আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকে। তবে মহামারি করোনার পর থেকে বকের সংখ্যা বেড়েছে।

জজবাড়ির ছোট ছেলে শাহীনুর ইসলাম রেজভি শাহীন জানিয়েছেন, আমার বোন কর্মস্থল থেকে পাখির খোঁজ রাখেন নিয়মিত। এখানকার বকগুলোর নাম শামুক খোল। বাড়িটির আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বিল। বিলে প্রচুর শামুক, মাছ ও ব্যাঙ রয়েছে। বিলের মধ্যে কোলাহলমুক্ত ওই বাড়িটি দীর্ঘদিন থেকেই পাখিদের নিরাপদ আবাস। বক ছাড়াও এই বাড়িতে মিলবে মাছরাঙা, চিল, বাজপাখি, কাঠঠোকরা, ঘুঘু, টিয়াসহ বিলুপ্ত অনেক পাখি।

জজের বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঝোঁপঝাড়বিশিষ্ট জজবাড়ির এক পাশে দুটি বিশাল শিমুল গাছ। বকেরা বাড়ির অন্যান্য গাছে দৌড়ঝাঁপ করলেও তাদের আসল বসতি ওই শিমুল গাছকে ঘিরে। দেখা গেছে, গাছজুড়ে বসেছে পাখিদের মেলা। শাহীন জানিয়েছেন, পাখিগুলো বেশ আড্ডাবাজ, তবে শান্ত প্রকৃতির। এ-ডাল থেকে ও-ডালে গিয়ে ঝগড়া, খুনসুটি, বাচ্চাদের যত্ন আর পাখিদের ডানার ছপাত ছপাত শব্দে বাড়িটিতে যেন পাখির একাধিপত্য। এত বিলাশ বাড়িজুড়ে থাকে মাত্র দু-তিনজন মানুষ। জজবাড়িজুড়ে রয়েছে কয়েকটি আধা খনন করা পুকুর। পুকুর আর বাড়ি সংলগ্ন বিশাল বিলের শামুক ও জলজ প্রাণী খেয়েই ওরা বেঁচে থাকে। বকেরা ডিম দেওয়ার আগে ওই বাড়িতে থাকা অন্য কোনো গাছ বাছাই করে নেয়। তারপর বাসা বানিয়ে ডিম ও বাচ্চা ফুটিয়ে বাচ্চাসহ আবার ওই শিমুল গাছে জায়গা করে নেয়। নীরবতা, গাছ ও পাখির মিতালিতে ওই বাড়ির প্রাঙ্গণ ঘিরে সকাল-সন্ধ্যায় পুরো এলাকা আন্দোলিত হয় বকের কলতানে। বিভিন্ন পাখির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বকগুলো এখন ছড়িয়ে পড়েছে ওই বাড়ির পাশে অন্য নির্জনে। চৈত্র মাসে নদীনালা কিংবা খালবিলে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে ওরা আবার ফিরে আসে ওই বাড়িতে। এরপর প্রায় অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত থাকে এখানে। এর মধ্যে বর্ষার প্রজনন মৌসুমে বক ছানা জন্ম নেয় এখানে। শামুকখোল বকগুলো ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আসে আবার অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে চলে যায়। তবে অন্য বকগুলো থাকে সারা বছর। প্রকৃতির এই নিরীহ পাখিগুলো নিরাপদে থাকে ওই জজ পরিবারে। নির্জন ওই বাড়িতে কোনোরকম ভয়ভীতি নেই বলে এখন বাড়িটি পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে, বলেছেন শেরপুর বার্ড ক্লাবের সভাপতি মুগনিউর রহমান মনি। মনির দাবি, ওই বাড়িতে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় অসংখ্য পাখির দেখা মেলে। এজন্য মানুষের যাতায়াত সংরক্ষিত ও বর্তমান এই নীরব পরিস্থিতি বজায় রাখা দরকার। 

সর্বশেষ খবর