সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কিডনি বিক্রি চক্রের তিনজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রান্তিক মানুষকে ফুঁসলিয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে গিয়ে কিডনি কেনাবেচা চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশ। চক্রের সদস্যরা ভারতে একটি কিডনি প্রায় ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করলেও ভুক্তভোগীকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা দিত। কিডনি হারানো এমন এক ভুক্তভোগী মো. রবিন খানের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের শনাক্ত ও ধানমন্ডি মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। এ সময় জানানো হয়, গত শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির ২/এ রোডে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্য মো. রাজু হাওলাদার, শাহেদ উদ্দীনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আতাহার হোসেন বাপ্পীকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা এ পর্যন্ত ১০ জনকে ভারতে পাঠিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তারা ভুক্তভোগীকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা দিত। চক্রের সদস্যরা প্রথমে বিদেশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করত। পরে ভারত নিয়ে তাকে কিডনি দিতে রাজি করতে নানাভাবে বোঝানো হতো। রাজি না হলে কিডনি দিতে বাধ্য করা হতো। এই চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে আমাদের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। ভুক্তভোগী মো. রবিন খানের অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে এপ্রিলে মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের পেছনে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে চা খেতে খেতে সংসারের অভাব-অনটনের কথা বলছিলেন। তখন পাশে বসা মাছুম এসব কথাবার্তা শুনে নিজ থেকেই রবিনকে বলে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং চাকরি দিতে পারবে। এরপর মাছুম নিজ খরচে ভারত নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে রবিন রাজি হয়। তার পাসপোর্টও তৈরি করে দেয় মাছুম। ভারতে চাকরির জন্য প্রয়োজন বলে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রবিনকে ধানমন্ডি ল্যাব এইড হাসপাতালে কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা করায়। সেখানে চক্রের আরেক সদস্য গ্রেফতার রাজুর সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা ভারতের ভিসা করানোর জন্য রবিনের পাসপোর্ট রেখে দেয়। ভিসা হওয়ার পর মাছুম ও রাজু রবিনের সঙ্গে গ্রেফতার শাহেদ ও আতাহারের পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর তাদের দেওয়া বিমানের টিকিট নিয়ে ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে যায় রবিন। সেখানে এই চক্রের শাহীন ও সাগর ওরফে মোস্তফা বিমানবন্দরে তাকে রিসিভ করে এবং রবিনের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। তারা রবিনকে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় ২০-২৫ দিন আটকে রাখে। এর মধ্যে মাছুম বাংলাদেশ থেকে সেখানে যায়। এ সময় মাছুম রবিনকে তার একটি কিডনি প্রদানের জন্য প্ররোচিত করে। ভয়ভীতিও দেখায়। তারা নয়াদিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে রবিনের বিভিন্ন পরীক্ষা করায়। পরে গুজরাটের মুক্তিনগর এলাকায় তাকে আটকে রাখে। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে ২০২৪ সালের ৪ মার্চ গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে একটি কিডনি প্রদানে বাধ্য করা হয়। কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষরও নিয়ে নেয় তারা। এ সময় রবিন জানতে পারে, অভিযুক্তরা দালাল চক্রের কাছে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় তার কিডনি বিক্রি করেছে। অপারেশন শেষে চার দিন পর ছাড়পত্র প্রদান করে হাসপাতাল। এরপর তারা রবিনকে ভারতের অজ্ঞাত স্থানে আরও ১০-১১ দিন আটক রাখে। তাকে জানানো হয়, বাংলাদেশে অবস্থানকৃত চক্রের অন্য সদস্যরা রবিনের স্ত্রীর বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন সময় ৩ লাখ টাকা প্রদান করেছে এবং আরও ৩ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেয় তারা। দেশে এসে রবিন বুঝতে পারে, সে বড় দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে তার কিডনি হারিয়েছে। কিডনি হারিয়ে রবিন আজ কর্মক্ষমহীন মানুষ। পরে রবিন ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশকে সবকিছু জানায়।

সর্বশেষ খবর