মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

যৌক্তিক শুল্ক করার প্রস্তাব ১৭ পণ্যে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ সামাল দিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ১৭ নিত্যপণ্যের শুল্ক যৌক্তিক করার প্রস্তাব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে ভোজ্য তেল, চিনির মতো আমদানি পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্কারোপ প্রত্যাহার করে সুনির্দিষ্ট শুল্কারোপ করার কথা বলা হয়েছে। ভোজ্য তেলের ওপর তিন স্তরের পরিবর্তে এক স্তরে ভ্যাট নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। আদা, জিরা, তেজপাতার মতো মসলাজাতীয় পণ্যে উচ্চশুল্কের পরিবর্তে ন্যূনতম শুল্কারোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১১ সালের আইনে যে ১৭টি নিত্যপণ্য রয়েছে সেগুলোর শুল্ক যৌক্তিক করার প্রস্তাব এনবিআরে পাঠানো হয়েছে।

নিতপ্রয়োজনীয় ১৭টি পণ্য হচ্ছে- সয়াবিন তেল, পাম ওয়েল, চিনি, পিঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা এবং খাবার লবণ (বিট লবণ ছাড়া)।

সিনিয়র সচিব বলেন, চিনি, তেল, মসলার মতো কিছু নিত্যপণ্য রয়েছে যেগুলোর শুল্ক শূন্য না হলেও কাছাকাছি করা যায়। বিশেষ করে চিনি, ভোজ্য তেলের মতো আমদানিপণ্যগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট শুল্কারোপের প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও শুল্ক বাড়বে না। ভোক্তা স্বস্তি পাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে আমদানিকারকদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক ও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ছাড়াও প্রতি টন চিনিতে নির্দিষ্ট ৩ হাজার টাকা কর দিতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনি ভোক্তার হাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৪০ থেকে ৪২ টাকা পর্যন্ত শুল্ক যোগ হয়। এর ফলে ১০০ টাকার আমদানিকৃত চিনির দাম ভোক্তা পর্যায়ে প্রায় দেড় শ টাকা পড়ছে। এনবিআরে পাঠানো চিঠিতে বিভিন্ন ধরনের এই শুল্ক কমিয়ে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনির ওপর ২০ হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনির ওপর ২৫ হাজার টাকা সুনির্দিষ্ট আমদানি শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একইভাবে বর্তমানে ভোজ্য তেলের ওপর তিন স্তরে ভ্যাট কাটা হয়। আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন স্তরবিশিষ্ট ভ্যাট প্রত্যাহার করে আমদানি পর্যায়ে নির্দিষ্ট ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তেজপাতা, জিরা, আদার মতো মসলাজাতীয় পণ্যে উচ্চশুল্কের পরিবর্তে ন্যূনতম শুল্কারোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। গত বছর ভারত থেকে আমদানিকৃত জিরার শুল্কায়ন মূল্য ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ডলার নির্ধারণ করেছে এনবিআর। এর আগে যেখানে এক ট্রাক ২৫ টনের এক গাড়ি জিরার শুল্ক দিতে হতো ৩০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা; এখন তা ৬০ লাখ টাকার ওপরে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। ফলে ভোক্তাপর্যায়ে দাম পড়ে অনেক বেশি। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে মসলাজাতীয় পণ্যের দামও অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এসব পণ্যে ন্যূনতম শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুল্ক কমানোর পাশাপাশি কিছু পণ্যের শুল্ক কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে বলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, কিছু ডালজাতীয় পণ্য যেমন- মসুর ডাল, ছোলার ওপর কোনো শুল্ক নেই। এগুলোর ওপর কিছু শুল্কারোপ করা যেতে পারে।

এনবিআরে চিঠি পাঠানোর আগে নিত্যপণ্যের শুল্ক যৌক্তিক করার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় এনবিআর প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিত্যপণ্যের শুল্ক যৌক্তিক করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আমদানিনির্ভর পণ্যে অতিরিক্ত করারোপ করা হলে দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে সব ধরনের ভোক্তার ওপর। তাই আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ও কর যৌক্তিক হওয়া উচিত।

 

সর্বশেষ খবর