বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

খুনোখুনি বাড়ছেই

কুমিল্লায় জমি নিয়ে বিরোধে খুন স্বজনদের, কুষ্টিয়ায় কুলখানির দাওয়াত নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত, নড়াইলে পিঠে ছুরি মেরে হত্যা কক্সবাজারে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও বাগেরহাটে বুকে ছুরিকাঘাতে খুন

প্রতিদিন ডেস্ক

খুনোখুনি বাড়ছেই

পূর্ব শত্রুতা এবং তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ছয়জন খুন হয়েছেন। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

খুলনা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রূপসায় প্রতিপক্ষের হামলায় ঘাটভোগ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা রসুল মিনা (৪২) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হন। সোমবার রাত ১১টার দিকে ঘাটভোগ ইউনিয়নে বামনডাঙ্গা বাজার এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় রসুল মিনাসহ চারজন আহত হন। পরে গুরুতর অবস্থায় রসুল মিনাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হামলায় আহত অন্যরা হলেন- আতাহার মিনা (২৮), ফারুক মিনা (৩২) ও পান্না মিনা (৩০)। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে মামাতো ভাই ছালেহ আহম্মেদকে (৩৭) হত্যার অভিযোগ উঠেছে দুই ফুপাতো ভাই ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে। সোমবার উপজেলার দেড়কোটা গ্রামে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। গতকাল লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। নিহত ছালেহ আহম্মেদ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দেড়কোটা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। আহতরা হলেন নিহতের বাবা আবুল কাশেম ও তার ছোট ভাই আবদুল মতিন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড়কোটা গ্রামের ব্যাপারী বাড়ির বাসিন্দা আবুল কাশেমের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে ভাগনে জামাল উদ্দিন ও মহিন উদ্দিনের বিরোধ রয়েছে। এর জেরে সোমবার সন্ধ্যায় উঠান ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় জামাল উদ্দিন ও মহিন উদ্দিনসহ অন্যরা ছালেহ আহম্মেদকে ছুরিকাঘাত করে। আবুল কাশেম ও তার ছোট ছেলে আবদুল মতিনকে পিটিয়ে জখম করে। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক ছালেহ আহম্মেদকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের বাবা আবুল কাশেম বলেন, জামাল উদ্দিন ও মহিন উদ্দিন সম্পর্কে আমার ভাগনে। সম্পত্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। সন্ধ্যায় আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস উঠান ঝাড়ু দেওয়ার সময় জামাল উদ্দিন, মহিন উদ্দিন ও তাদের মা মনোয়ারা বেগম মেয়েকে মারধর করেন। এ সময় ছালেহ আহম্মেদ বাধা দিতে গেলে তারা ছুরি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। আমি ও আমার ছোট ছেলে এগিয়ে গেলে তারা আমাদেরকেও পিটিয়ে জখম করে। চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবুল হাসেম সবুজ জানান, ছালেহ আহম্মেদের তলপেটে ও হাতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা বলেন, রাতে নিহতের বাবা আবুল কাশেম বাদী হয়ে জামাল উদ্দিন, মহিন উদ্দিন ও তাদের মা মনোয়ারা বেগম এবং জামালের স্ত্রী শাহেনা আক্তারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ মনোয়ারা ও শাহেনাকে গ্রেফতার করেছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, চাচির কুলখানি আয়োজনে দাওয়াত দেওয়া নিয়ে বিরোধে একই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। সোমবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া সদরের ঝাউদিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার এসআই মেহেদি হাসান জানান, নিহতের নাম বকুল বিশ্বাস (৫৫)। তিনি হাতিয়া গ্রামের মৃত আফতাব বিশ্বাসের ছেলে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহত বকুলের চাচাতো ভাই হামলায় আহত নিয়াজি খান জানান, বৃহস্পতিবার আমার চাচি জাহানারা খাতুন মারা যান। শনিবার কুলখানির আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনের রান্না ও দাওয়াত দেওয়াকে কেন্দ্র করে আরেক চাচাতো ভাই শিপন বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধ বাধে। শিপনের দাবি তার সমাজের লোকজন নিয়ে কুলখানি করতে হবে। এতে অসম্মতি জানালে সোমবার সন্ধ্যার পর শিপনের নেতৃত্বে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ৩০-৪০ জন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, লোহাগড়ায় ছুরিকাঘাতে ফয়সাল মুন্সী (১৯) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মীপাশা এলাকার মারকাজুল মাদরাসার উত্তরপাশের সড়ক থেকে পিঠে ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ফয়সাল লোহাগড়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের আহমেদ মুন্সীর ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে স্থানীয়রা পিঠে ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় যুবকের লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ যুবকের লাশ উদ্ধার করে। পরে তার পরিচয় উদঘাটন করে পুলিশ। তবে কী কারণে কে বা কারা ফয়সাল মুন্সীকে হত্যা করেছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ।

লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। থানায় মামলা হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফে পূর্বশত্রুতার জের ধরে আবদুর রাজ্জাক (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত রাজ্জাক টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের আমির আহমদের ছেলে।

সোমবার সন্ধ্যায় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেষখালিয়াপাড়ার তুলাতুলি বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় আবদুর রাজ্জাক তার বন্ধু মো. আলীসহ বটতলী বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে সদর ইউনিয়নের মহেষখালিয়াপাড়া গ্রামে তার গতিরোধ করেন নতুন পল্লানপাড়া গ্রামের সাহাব উদ্দিন, আমান উল্লাহ, মো. সেলিমসহ কয়েকজন। তারা রাজ্জাককে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে গ্রামের ভিতরে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন মারাত্মক আহত অবস্থায় রাজ্জাককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক নাসিম ইকবাল বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই রাজ্জাকের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পাশাপাশি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, মোরেলগঞ্জে আল ইমরান খান (২৫) নামে এক যুবক ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় আমতলা এলাকায় ভ্যানচালক আহাদ শেখ তুচ্ছ ঘটনায় তর্কের একপর্যায়ে তার বুকে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয়রা ইমরানকে দ্রুত বাগেরহাট সদর হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ইমরান খান পার্শ্ববর্তী ইন্দুরকানি উপজেলার চরণী পর্তাশী গ্রামের মো. সামাদ খানের ছেলে। পুলিশ ইমরানের ঘাতক বলইবুনিয়া গ্রামের সেলিম শেখের ছেলে আহাদ শেখকে (১৭) গতকাল সকালে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা সামাদ খান বাদী হয়ে গতকাল মামলা করেছেন বলে থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুদ্দীন জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর