শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সরেজমিন

ভোগান্তির নাম হানিফ ফ্লাইওভার

যানজট লেগেই থাকে, ওপরে বাসস্টপ, টোল পরিশোধে দীর্ঘ অপেক্ষা, ঘটছে দুর্ঘটনাও

সাইফ ইমন

ভোগান্তির নাম হানিফ ফ্লাইওভার

হানিফ ফ্লাইওভারে যানজটে ভোগান্তি -জয়ীতা রায়

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ভয়াবহ যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। ১০.৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই ফ্লাইওভারটি পার হতে ১০ মিনিট সময় লাগার কথা থাকলেও লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। অন্যদিকে ফ্লাইওভারের ওপর বিভিন্ন স্পটে বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও পুলিশের অবহেলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের। এই ফ্লাইওভারে ওঠানামার রাস্তা, টোল প্লাজা ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, টোল প্লাজায় ধীরগতিতে টোল আদায়ের কারণে যানবাহনের লম্বা লাইন সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে যানবাহনের এ লাইন সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। আবার টোল দেওয়ার পরও সামনে এগোতেই গুলিস্তান পয়েন্টে যানজটে আটকে যাচ্ছে। সব মিলে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী থেকে গুলিস্তান পার হতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও পুলিশের অবহেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রথম প্রকল্প মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ ও ফ্লাইওভারটি পরিচালনা করছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি। সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারটির ওপরেই যত্রতত্র ও বেপরোয়াভাবে বাস থামিয়ে চালকরা যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করছেন। এ ফ্লাইওভার দিয়ে এক প্রকার ফ্রি-স্টাইলে চলাচল করে বাসগুলো। সন্ধ্যার পর থেকে সায়েদাবাদ অংশে এক প্রকার স্টপেজ বানিয়ে যাত্রী ওঠানোর কাজ করে দূরপাল্লার বাসগুলো। আর সারা দিন লোকাল বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করে ফ্লাইওভারের রাজধানী মার্কেট, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী পয়েন্টে। ফ্লাইওভারটির দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরাও যাত্রী ওঠানো-নামানোতে চালকদের সহযোগিতা করে। এজন্য তারা বাস চালক-হেলপারদের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা নেন। ফ্লাইওভারের গুলিস্তান টোল প্লাজার বহির্গমন অংশের মুখেই লোকাল বাসের স্পপেজ। ফ্লাইওভার থেকে নেমে বাসগুলো ইউটার্ন নেয় টোল প্লাজার সামনে থেকেই। ফলে এ অংশে ফ্লাইওভার থেকে নামতে যাত্রীদের দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। অধিকাংশ সময়ই গুলিস্তান-মতিঝিলের যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন ফ্লাইওভারের জয়কালী মন্দির বরাবর আসার পরই। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। এ ছাড়া এই ফ্লাইওভারের শনির আখড়া অংশের প্রবেশপথেও যাত্রীদের যানজটে পড়তে হয়। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই যানজট ছাড়িয়ে যায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত (রায়েরবাগ, মাতুয়াইল মেডিকেল)। এদিকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে রাতে চাপ বেড়েছে ফ্লাইওভারের ধোলাইপাড় অংশেও। প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টোল প্লাজায় তীব্র যানজট দেখা যায় এই অংশে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে চালু হয় ফ্লাইওভারটি সংশ্লিষ্ট এলাকায় যানজট নিরসনের জন্য। তবে যানজট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না এ প্রকল্পটি। ফ্লাইওভারের ঢাকা মেডিকেল প্রান্তের অবস্থা আরও করুণ। দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। পথচারীরা বলে থাকেন, ঢাকা মেডিকেলের সামনে ফ্লাইওভারের গাড়িগুলো আটকে রেখে পুলিশ পুরান ঢাকার গাড়িগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অধিক সময় আটকে রাখে ফ্লাইওভারের গাড়িগুলো। এতে ফ্লাইওভারের ওপর ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানে আসা আইনজীবী বুশরা জামান বলেন, ‘লোকাল বাসগুলো এলোপাতাড়িভাবে ঘুরতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি করে। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে পড়তে হয় বিপদে। বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমি মনে করি, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। অনেক বছর থেকেই এই সমস্যা চলমান আর কত? আর কত দুর্ভোগ পোহালে কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থাপনায় মন দেবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রায়ই এই ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ মারা যাচ্ছে নির্মাণে ত্রুটির কারণে। যদি তাই হয় এর জন্য কারা দায়ী? তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? পৃথিবীর কোথাও ফ্লাইওভারের মাঝপথে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করতে দেখিনি। অথচ এখানে স্বেচ্ছাচারিতায় চলছে বাসগুলো।’

শনির আখড়ার বাসিন্দা রাশেদ আহমেদ বলেন, অফিসে যেতে প্রতিদিন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করি। এ যেন নরক যন্ত্রণা। ফ্লাইওভার ব্যবহার করে মানুষ সময় বাঁচাতে, আর আমাদের জন্য উল্টো হয়েছে। ২০ মিনিটেরও রাস্তা নয়, অথচ সময় লাগছে ১ থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি। ফ্লাইওভারেই কাটাতে হয় ৪০ মিনিটের বেশি। ফ্লাইওভারে ওঠার রাস্তায় যানজট, টোল বুথে এবং ফ্লাইওভার থেকে নামার রাস্তায় তীব্র যানজট থাকে। অনেক সময় শনির আখড়ার জ্যাম সাইনবোর্ড পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।’

 

সর্বশেষ খবর