বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৪ - ২০২৫

স্মার্ট বাংলাদেশে প্রয়োজন স্মার্ট শুল্ক নীতিমালা

হাবিব উল্লাহ ডন, প্রেসিডেন্ট বারভিডা

শাহেদ আলী ইরশাদ

স্মার্ট বাংলাদেশে প্রয়োজন স্মার্ট শুল্ক নীতিমালা

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) প্রেসিডেন্ট মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য একটি স্মার্ট শুল্ক নীতিমালা প্রয়োজন। শুল্ক নীতিমালার যেন একটি ধারাবাহিকতা থাকে। প্রতি বছর যেন পরিবর্তন না হয়।

গতকাল রাজধানীর গুলশানের কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন তা বাস্তবায়নে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য একটি স্মার্ট বাজেট দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে একটি বাজেটের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত কমপক্ষে পাঁচ বছর। তিনি বলেন, একটি শুল্ক নীতিমালা কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য হওয়া উচিত।

এটা করা হলে ক্রেতা এবং বিক্রেতা সবাই স্বস্তির মধ্যে থাকবে, কেউ টেনশনে থাকবে না। কারণ গাড়ির দাম বাড়া-কমা নিয়ে বাজেটের আগে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। অনেকেই ডিউটি বাড়ানোর আগে গাড়ি কিনে জিতেন, আবার অনেকেই না কিনে আফসোস করেন। আর যদি ডিউটি কমে তাহলে বিক্রেতা লোকসানে পড়েন। হাবিব উল্লাহ ডন আরও বলেন, হঠাৎ করে শুল্কনীতিমালা পরিবর্তন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ডিউটি বাড়ালে যাদের কাছে গাড়ির স্টক থাকে তারা রাতারাতি ধনী হয়ে যায়। আবার ডিউটি কমালে যাদের স্টকে গাড়ি আছে, তাদের অনেক লোকসান হয় এবং ব্যাংকের কাছে ঋণী হয়। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরেও সরকার গাড়ি আমদানির ডিউটি অপরিবর্তিত রেখেছে। আমার অনুরোধ থাকবে আগামী অর্থবছরেও সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একই পথে হাঁটবে। একটি স্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি শুল্ক নীতিমালা যেন থাকে সেটাই আমার প্রত্যাশা। হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, বারভিডা সব সময় রাজস্ব আয় বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখেই এনবিআরকে প্রস্তাবনা দেয়। ক্রেতারা যাতে গাড়ি কিনতে পারেন এবং ডিউটি বেশি দিতে না হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ডিউটি কমালে সেই পণ্য বেশি আসে এবং ক্রেতা কিনতে পারে। ফলে সরকার অনেক বেশি রাজস্ব পায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, একটি গাড়িতে ২০ লাখ ডিউটি হলে ২ হাজার গাড়ি আসে। কিন্তু সরকার যদি ৩ লাখ টাকা ডিউটি কমায় তাহলে ২ হাজারের পরিবর্তে ৩ হাজার গাড়ি আসবে। গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেলে সরকারের রাজস্ব আয় অনেক বৃদ্ধি পায়। দাম কমলে চাহিদা বাড়ে, দাম বাড়লে চাহিদা কমে সরকারের এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। বারভিডার প্রেসিডেন্ট বলেন, গণপরিবহনের বিকল্প মাইক্রোবাসের সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি শূন্য করা উচিত। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সাশ্রয়ী হাউব্রিড গাড়ির ডিউটি কমানো এবং ইলেকট্রিক গাড়ির ২০ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটে শূন্য করে দেওয়া উচিত। সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি শূন্য করলেও সরকার ৫৯ শতাংশ রাজস্ব পাবে। হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১০-১২ মাইক্রোগ্রাম। অথচ ইউরোপ-আমেরিকাসহ পরিবেশ সুরক্ষায় সক্রিয় রাষ্ট্রগুলোতে এর পরিমাণ ০.১ থেকে ০.৫ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ বাংলাদেশের বায়ুতে সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক কালো কার্বনের উপস্থিতি ১০০ থেকে ১২০ বেশি। তিনি আরও বলেন, মরণব্যাধি ক্যান্সার সংক্রমণের প্রধান উৎসকে নির্মূল করতে আমরা কি সত্যিকার অর্থে কিছু করছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারা বছর মাত্র ৪৮ দিন কেবল সাধারণ মানুষ নয়, নীতিনির্ধারকরাও নির্মল বায়ু সেবন করার সুযোগ পান। এটাই নিষ্ঠুর বাস্তবতা। বিপজ্জনক ও দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ থেকে বর্তমান এবং আগামীকে রক্ষা করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ-সংক্রান্ত শুল্ক কাঠামো ঢেলে সাজাবে এবং দূষণমুক্ত মোটরযান আমদানিকে উৎসাহিত করবে বলে আমরা আশা করি। বারভিডার প্রেসিডেন্ট বলেন, ফসিল ফুয়েলের চেয়ে ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল কমপক্ষে চার গুণ বেশি জ্বালানি সাশ্রয় করে। পরিবহন খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলে অতি দরকারি বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে তেল আমদানি যেমন কমবে, তেমনি সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ পুরো আমদানি খাতকে নির্ভার করে তুলবে।

সর্বশেষ খবর