শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আনন্দে আত্মহারা নাবিকদের পরিবার

প্রতিদিন ডেস্ক

আনন্দে আত্মহারা নাবিকদের পরিবার

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া নাবিকরা ফিরে এসেছেন নিজের ঘরে। মৃত্যুর মুখ থেকে জীবন্ত ফিরে আসা এই নাবিকদের পরিবার এখন আনন্দে আত্মহারা। এই ফিরে আসার ঘটনা নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

লক্ষ্মীপুর : দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির এক মাস পর লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের কাছে ফিরেছেন সেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান। তাকে পেয়ে স্বজনরা এখন আনন্দে আত্মহারা। গত ঈদের আনন্দ মলিন থাকলেও এখন সেই আনন্দের চাইতে আরও খুশি পরিবারটি। ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন সেই নাবিক।

আইয়ুব জানান, ১২ মার্চ হঠাৎ জাহাজে আক্রমণ করে দস্যুরা (প্রথমে ১৩ জন ও পরে বাড়ে দস্যুর সংখ্যা)। এ সময় সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর জাহাজের মালিক পক্ষের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। সবার কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এ সময় এক রুমে সবাইকে জিম্মি রেখে নোংরা পরিবেশে নির্যাতন করত দস্যুরা। পুরো সময় ভয় উৎকণ্ঠায় ছিলাম। পরে মুক্তিপণ নিয়ে ১৪ এপ্রিল রাত ১২টা ৮ মিনেটে আমাদের ছেড়ে দেয় তারা (যা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হয়)। এ সময় নৌবাহিনীর স্কটে হাইরিস্ক এরিয়া পার করে দেয়। পরে দুবাই হয়ে দেশে ফেরেন। দেশবাসীর দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এখন অনেক উচ্ছ্বাসিত জানিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এ নাবিক।

ফরিদপুর : সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুুল্লাহর থার্ড অফিসার তারেকুল ইসলামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামে। গ্রামে ফিরতেই আনন্দের কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনসহ গ্রামবাসী। গতকাল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বড়ভাই হাসানের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছান তারেকুল। বাড়িতে ঢুকতেই হাসি ফোঁটে সবার মুখে। তারিকুলকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী। সরেজমিনে তারেকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা হাসিনা বেগম বুকে জড়িয়ে ধরেছেন আদরের সন্তানকে। এ সময় স্ত্রী নুসরাত জাহান যূথীসহ সবার চোখেই ছিল আনন্দাশ্রু। তারেকুল তার দেড় বছর বয়সী একমাত্র কন্যা তানজিহাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করছেন। স্ত্রী যূথীর মুখে হাসি। স্বামীকে দেখতে পেয়েও কথা বলতে পারছিল না সে। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। তারেকুল ইসলাম বলেন, জীবনের ওই কটা দিন স্মরণীয় থাকবে। এখন অনেক ভালো লাগছে। ভেবেছিলাম হয়তো আর কোনোদিন কারও সঙ্গে দেখা হবে না। আল্লাহর রহমতে বাবা-মার দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এসেছি। আমাদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

নাটোর : জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদের বাড়ি ফেরায় পরিবারে বইছে ঈদের আনন্দ। গতকাল সকালে জয় মাহমুদ তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। এ সময় পরিবার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন জয় মাহমুদকে এক পলক দেখতে। এ সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে হাসি আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জয় মাহমুদ। বাড়ি ফিরে জয় মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের যখন জিম্মি করে ছিল তখন আমরা ভাবিনি বেঁচে ফিরব। তবে আস্তে আস্তে তারা যখন স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। তখন মনে একটু একটু করে সাহস পাই আমরা। বন্দুকের নলের নিচে আমাদের থাকতে হয়েছে। ৩৩ দিন ৩৩ বছর মনে হয়েছে। প্রতিটি দিন ছিল কষ্টের। এবার ঈদের আনন্দ ছিল না। ঈদের দিন ঈদ মনে হয়নি। ঈদে শুধু নামাজ পড়তে পেরেছিলাম আর কিছুই করতে পারিনি। এখন বাড়ি ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।

সিরাজগঞ্জ : জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে নিজ বাড়িতে পৌঁছেছেন নাবিক নাজমুল হক হানিফ। গতকাল ভোরে সিরাজগঞ্জে নিজগ্রাম কামারখন্দ উপজেলার চর নবীনগরে এসে পৌঁছান নাবিক নাজমুল হক হানিফ। ছেলেকে দেখেই বুকে জড়িয়ে সুখের কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নার্গিস বেগম ও বাবা আবু সামা। নাবিক নাজমুল হক হানিফ সুস্থভাবে স্বজনদের মধ্যে আনন্দ-উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নাজমুল হক হানিফ বলেন, সোমালিয়ার সময় সকাল ১০টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটি দখলে নেয়। দখল নিয়ে বড় বড় অস্ত্র তাক করেছিল। তারপর সবাইকে বন্দি রাখে। তবে জলদস্যুরা মুসলমান ছিল আমরাও মুসলমান ছিলাম। এ জন্য কিছুটা সহানুভূতি দেখিয়েছিল। জাহাজে ওরাও রান্না করে খেয়েছে আমরাও রান্না করে খেয়েছি।

খুলনা : সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মির দুই মাসের বেশি সময় পরে বাড়িতে ফিরেছেন খুলনার নাবিক মো. তৌফিকুল ইসলাম। তিনি মুক্তি পাওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়র। গতকাল সকাল ১০টার দিকে খুলনা নগরীর ছোট বয়রা করিমনগর এলাকার নিজ বাড়িতে ফেরেন তৌফিক। বাড়িতে আসার পর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন স্বজনরা। আবেগঘন পরিবেশে আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা দিল আফরোজা। বললেন, ‘সন্তান কতদিন পর বাড়িতে ফিরে এসেছে আনন্দ লাগবে না! মহান আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। স্বামী তার স্ত্রীর কাছে ফিরেছে। সন্তানরা তার বাবাকে ফিরে পেয়েছে। আমি সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া করি।’ এ সময় বাবা ইকবাল হোসেন, স্ত্রী জোবায়দা নোমান, দুই সন্তান তাসফিয়া (৭) ও আহমেদ রুসাফি (৫) ইঞ্জিনিয়র তৌফিককে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। তারা আর কখনো তৌফিককে কোথাও যেতে দেবে না বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বারবার বলতে থাকেন।

নোয়াখালী : গতকাল দুপুরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক আনোয়ারুল হক রাজু নিজ বাড়ি ফিরে এসে বলেন, রাতে আমরা বিজে ঘুমাতাম। যখন কোনো নেভি শিপ যেত তখন জলদস্যুরা আরও সতর্ক হয়ে যেত। তখন তারা স্পেশালি আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করে রাখত। যার কারণে নেভি শিপ গেলে আমাদের আরও সমস্যা হতো। ট্রিগার টেনে অস্ত্র আমাদের দিকে তাক করত। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, ঘুম থেকে উঠে চোখ খুললেই দেখতাম অস্ত্র আমার দিকে তাক করা।

এদিকে ছেলের ফিরে আসার দিনক্ষণ আগেই জানা ছিল মা-বাবার। রাজুর বন্ধুরা চট্টগ্রাম থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। দেখা গেছে, এ সময় ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেন মা-বাবাসহ স্বজনরা। এতে অবসান ঘটে এক দীর্ঘ উৎকণ্ঠার। একই সঙ্গে পরিবারে লাগে উৎসবের আমেজ। সুস্থভাবে বাড়িতে ফিরতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছেন রাজু। ছেলের ফিরে আসায় মা রেঁধেছেন তার পছন্দের গরুর মাংস ও সামুদ্রিক মাছ।

সর্বশেষ খবর