শিরোনাম
শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মন্ত্রীর নির্দেশের তোয়াক্কা নেই

দেদার চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা হেলমেট ছাড়াই মিলছে জ্বালানি, বন্ধের ঘোষণার পর বেড়েছে চাঁদার হার

শামীম আহমেদ

মন্ত্রীর নির্দেশের তোয়াক্কা নেই

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশের প্রভাব পড়েনি সড়কে। আগের মতোই রাজধানীর সড়কগুলোয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। পেট্রল পাম্পগুলোও হেলমেট না থাকলে জ্বালানি দেওয়া বন্ধ করেনি। উল্টো ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশের পরদিনই এ খাতে বেড়েছে চাঁদার হার। গতকাল সরেজমিনে রাজধানী ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই সামনে এসেছে।

গত বুধবার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭’-এর অধীনে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন থেকে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা বা গাড়ি যেন ঢাকা শহরে না চলে। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া বুধবার থেকেই সারা দেশে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। সড়কে অব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বিআরটিএর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত উন্নয়নের পরও সড়ক, মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা কেন?’ দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে এসব নির্দেশ দেন তিনি। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে অবৈধ চাঁদার হার বৃদ্ধি ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নির্দেশের কোনো প্রভাব গতকাল রাজধানীতে দেখা যায়নি। গতকাল দুপুরে বাড্ডার সিটিজেন ফিলিং স্টেশনে গিয়ে হেলমেট না থাকলেও বেশ কয়েকজন বাইকারকে জ্বালানি দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মাথায় লাগানোর হেলমেট  মোটরসাইকেলে ঝুলিয়ে মূল সড়কে চলতে দেখা গেছে অনেক বাইকারকে। এ ছাড়া পল্টনে বায়তুল মোকাররম এলাকায় মূল সড়কে চলতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। হাতিরপুল এলাকাতেও দেখা গেছে একই চিত্র। ব্যতিক্রম ছিল না নতুন বাজার  থেকে বেরাইদ পর্যন্ত ১০০ ফুট মাদানি এভিনিউ। ভাটারা থানার পাশের সড়কটিতে প্রতিদিনের মতো গতকালও মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে দেখা গেছে শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশা। দ্রুতগতির সড়কটিতে উল্টো পথেও অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেখা গেছে। রিকশার পাশাপাশি  মোটরসাইকেল চালিয়ে দেখা গেছে ফাঁকা রাস্তায় রিকশাগুলোর গতি উঠছে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের ওপরে। নতুন বাজারে ভাটারা থানার সামনের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে গিয়ে পাওয়া যায় রেকার অপারেটর এমদাদকে। ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকানোর কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমরা আগে থেকেই এগুলোর বিরুদ্ধে তৎপর আছি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এটা রেজ্যুলেশন হবে। মন্ত্রী স্বাক্ষর করবেন। এরপর আমরা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেই নির্দেশনা পাঠাব।

এদিকে পল্টন এলাকার একাধিক রিকশাচালক জানান, রিকশা নামাতে কেউ নিষেধ করেনি; তবে রিকশার মালিক বলেছেন, আগামী মাস থেকে প্রতিদিনের জমা ৫০ টাকা বেশি দিতে হবে। রাস্তায় রিকশা নামাতে উনার নাকি এখন বেশি চাঁদা দিতে হবে। নতুন বাজার এলাকার এক রিকশাচালক জানান, তিনি এক বছর ধরে প্রতিদিন ১০০ টাকা চাঁদা দিয়ে আসছেন। তার আগে দিতেন ৬০ টাকা। গতকাল থেকে চাঁদা ১২০ টাকা করা হয়েছে।

হাই কোর্ট ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরও সড়কে নতুন করে নেমেছে কয়েক লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজির কারণেই রিকশাগুলো বন্ধ হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করছে। ‘আইনগত অবৈধ’ এসব অটোরিকশার মালিক-চালকদের কাছ থেকে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। টাকার ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং ট্রাফিক ও থানা পুলিশের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পকেটে। রাজধানীতে প্রতিটি থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য এলাকাভেদে মাসে মালিককে দিতে হয় দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। টাকা দিলে দেওয়া হয় বিশেষ টোকেন, যা থাকে সিটের নিচে। ওই টোকেন থাকলেই সড়কে চলার অনুমতি মেলে। কিছু এলাকায় কিউআর কোড ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। মোবাইলে কোড স্ক্যান করলেই জানা যায় তার চাঁদা পরিশোধের হালনাগাদ তথ্য।

সর্বশেষ খবর