শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

দিনাজপুর প্রতিনিধি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

দাবদাহের এই সময়ে মাটির ঘরে এসির শীতলতা। ডিজিটাল যুগেও দিনাজপুরের অনেক গ্রামে এর কদর কমেনি। এখনো দেখা যায় নজরকাড়া এক তলা বা দো তলা বাড়ি। এই গরমে বিদ্যুৎ না থাকলেও মাটির ঘরে স্বস্তি রয়েছে বলে জানান বসবাসকারীরা। মাটির বাড়িগুলো বাইরে থেকে সাদামাটা মনে হলেও ভিতরে রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য। আলপনায় করা হয়েছে সুসজ্জিত। প্রতি বছরই মাটির প্রলেপ দেওয়া হয় বা রংবেরঙের নকশা এঁকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়। অনেকে চুনকামসহ বিভিন্ন রংও করেন। দেয়ালের নকশা প্রথম দেখলে অনেকের ওয়াল পেপার বা টাইলস বলে ভ্রম হতে পারে। অথচ এসব নকশা কোনো পেশাদার কারিগর বা শিল্পীর নয়- বাড়ির মা-বোনরা মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা শৈল্পিক সত্তা দিয়ে নিজ হাতে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। দিনাজপুরের বিরামপুরের খানপুর ইউপির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল অধ্যুষিত ধানজুড়ি গ্রামে শতাধিক বসতঘরের অধিকাংশই নকশা আর রঙের আলপনা করা ঐতিহ্যের মাটির বাড়ি দেখা যায়। পর্যটকরা সাজানো গ্রামটি দেখতে ভিড় করেন। একসময় মাটির ঘর ঠান্ডা বলে এটিকে গরিবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও বলা হতো। গরমের সময় আরামদায়ক। তাই অনেক গ্রামে বিত্তশালীদেরও দো তলা মাটির ঘর ছিল। অনেক গ্রামে এখনো রয়েছে। সদরের মহররমপুরের গাজী সুলতান জানান, দিনাজপুরে সাম্প্রতিক বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব মাটির ঘরের বেশির ভাগ হয় ভেঙে গেছে, না হয় ফেটে গেছে। মাটির সহজলভ্যতা, প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় মাটির তৈরি ঘর বানাতে অনেকে আগ্রহী। আউলিয়াপুর গ্রামের মোসাদ্দেকসহ কয়েকজন জানান, সাধারণত এঁটেল বা আঠালো মাটি দিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে কাদায় পরিণত করা হয়। এরপর তৈরি করা হয় ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিটি ঘর তৈরিতে সময় লাগে মাসখানেক। কারণ একবারে দেয়াল তোলা যায় না। কিছু দেয়াল তোলার পর শুকাতে হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেওয়া হয়। অনেকে বাঁশ, মাটি, টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। তবে খরচ কম পড়ে। শ্রমিক না নিলে কমপক্ষে ১৬-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই মাটির ঘর ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে এর স্থায়িত্ব শতবছরও হতে পারে বলে তারা জানান। ধানজুড়ি গ্রামের হেমব্রমসহ অনেকেই বলেন, ধানজুড়ি গ্রামের সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই আমরা মাটির বাড়ি নির্মাণ করে আসছি এবং এখনো মাটির বাড়িতে আছি। ইটের বাড়ির চেয়ে মাটির বাড়িতে বেশি আরাম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর